এসি ল্যান্ড পদ আর খালি থাকবে না
মাঠপ্রশাসনে কোথাও আর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তথা এসি ল্যান্ড পদ খালি থাকবে না। ৫০৫টি পদের মধ্যে যেখানে ১১ মাস আগেও ১৪৩টি পদ শূন্য ছিল, সেখানে এখন শূন্যপদের সংখ্যা মাত্র ৩৯টি। শিগগির এই পদও পূরণ করা হবে।
ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে মাঠপ্রশাসনে জনসেবার গুরুত্বপূর্ণ এ পদটিকে আরও সক্রিয় ও জনবান্ধব করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রথমে শূন্যপদের লাগাম টানা হচ্ছে। এমনটিই জানিয়েছেন মন্ত্রণালয় দুটির দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাঠপ্রশাসন) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, এসি ল্যান্ড পদে থাকা কর্মকর্তারা শুধু নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবাই দিয়ে থাকেন না, তারা একাধারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও। এজন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা মোতাবেক এসি ল্যান্ড পদটিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে এটি নিয়ে পদশূন্যতার যে জটিল অবস্থা বিরাজ করছিল, সেই অধ্যায় এখন সমাপ্তির পথে।
এজন্য অবশ্যই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাতে মাঠপর্যায়ে যোগ দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তা জনগণের প্রকৃত সেবক হয়ে উঠতে পারেন, সেজন্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীও বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন।
এসি ল্যান্ড পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের তিনি এক মাসের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। কর্মস্থলে যোগ দেয়ার আগে ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তাদের এ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। তাছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের ই-নামজারি কার্যক্রমকে সফলভাবে এগিয়ে নিতে ভূমিমন্ত্রী নিজেই মনিটরিং করছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসি ল্যান্ডের শূন্যপদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। একসময় প্রায় সারা বছরই অর্ধেকের বেশি পদ খালি থাকত। যে কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ওপর বাড়তি চাপ পড়ত। তাদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এসি ল্যান্ডের কাজ করতে হতো। এজন্য প্রথমে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নেন বর্তমান জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।
তিনি যখন এই মন্ত্রণালয়ে এপিডি (অতিরিক্ত সচিব) ছিলেন, তখন এসি ল্যান্ডের শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণ করতে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেন। ফলে পর্যায়ক্রমে শূন্যপদের সংখ্যা কমে আসতে থাকে। যেমন, এ বছর ২৭ জানুয়ারি শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ১৪৩টি। সেটি এখন ৩৯। আগামী এক মাসের মধ্যে এ সংখ্যা আরও কমে আসবে। আশা করা যায়, আগামী বছরের প্রথম মাস থেকে রুটিন ওয়ার্ক সিস্টেমে থাকা শূন্যপদ ছাড়া কার্যত কোনো শূন্যপদ আর থাকবে না।
জানা গেছে, ২-৩ বছর আগেও এসি ল্যান্ডের শূন্যপদ ছিল দুই শতাধিক। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উপজেলাগুলোয় বছরের পর বছর এসি ল্যান্ডের পদ শূন্য থাকত। সেখানে এসি ল্যান্ডের কাজ করতে হতো ইউএনওদের। আবার এমনও নজির রয়েছে-এ ধরনের কোনো উপজেলায় নতুন ইউএনও দিতে বিলম্ব হলে পার্শ্ববর্তী স্টেশনের ইউএনওদের অতিরিক্ত আরও একটি উপজেলার এসি ল্যান্ডের নথি নিষ্পত্তি করতে হতো।
এতে ভূমি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ সেবা পেতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির অন্ত ছিল না। অবশ্য রাজধানী ঢাকাসহ এর আশপাশের জেলার এসি ল্যান্ড পদ কখনও খালি ছিল না। বরং এসব পদে পোস্টিং পেতে বড় ধরনের তদবির করার বিষয়টি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। মোদ্দা কথা, এসি ল্যান্ডের যেসব স্টেশন প্রাইজপোস্টিং হিসেবে চিহ্নিত, সেগুলো বাগে নিতে একশ্রেণির কর্মকর্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
প্রসঙ্গত, দেশের কোনো কোনো উপজেলায় এক যুগের বেশি সময় এসি ল্যান্ড পদ খালি ছিল। এমনকি ১৮ বছর পর্যন্ত শূন্য ছিল বলেও গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। নওগাঁর সাপাহারে দীর্ঘ ১৪ বছর এসি ল্যান্ড পদ শূন্য ছিল। ২০০২ সালের ২৩ জানুয়ারি তৎকালীন এসি ল্যান্ড ইউনুছ আলী বদলি হলে পদটি শূন্য হয়।
এরপর ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সেখানে কোনো এসি ল্যান্ড ছিলেন না। এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর তৎকালীন ইউএনও রুহুল আমিন মিয়া বদলি হয়ে গেলে পুরো স্টেশন ফাঁকা হয়ে পড়ে। অবশ্য আশার কথা-বর্তমানে এখানেও এসি ল্যান্ড কর্মরত আছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে এসি ল্যান্ড পদটি ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২ বছরের বেশি সময় খালি ছিল। তৎকালীন এসি ল্যান্ড সারোয়ার মোর্শেদ ইউএনও পদমর্যাদায় বোচাগঞ্জ উপজেলায় বদলি হয়ে গেলে কর্মরত ইউএনও এসি ল্যান্ডের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এ কারণে জমির খাজনা খারিজসহ নামজারি প্রক্রিয়ার একেকটি আবেদন নিষ্পত্তি করতে যেখানে গড়ে ১৫ দিন লাগার কথা, সেখানে ২-৩ মাসেও সম্ভব ছিল না। এ সুযোগে ভূমি অফিস ঘিরে গড়ে ওঠা দালাল চক্র আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
তবে দীর্ঘদিন এসি ল্যান্ড না থাকার দুর্ভোগ এখন আর নেই। কারণ ৬ মাস ধরে এ উপজেলায় এসি ল্যান্ড কর্মরত আছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন