ঐক্যফ্রন্টের ‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ প্রস্তাব নাকচ
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে ১০ সদস্যের উপদেষ্টা নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে’- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংলাপে উপস্থিত একাধিক সূত্র এমন দাবি করেছে।
বুধবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে শুরু হওয়া এই সংলাপে দুই পক্ষেই ১১ জন করে অংশ নেন।
গত ১ নভেম্বর ঐক্যফ্রন্টের ২০ নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও শরিক ২৩ নেতার সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সাত দফা দাবির বিষয়ে সমাধান না আসায় ‘সীমিত’ পরিসরে দ্বিতীয় দফার সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
আজকের সংলাপে উপস্থিত একটি সূত্রের দাবি অনুযায়ী, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দ্বিতীয় দফা সংলাপে গণভবনে এসে লিখিতভাবে প্রস্তাব দেয়। তবে আওয়ামী লীগ তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।
সূত্র মতে, ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এটা সংবিধান সম্মত নয়। এতে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে আর এ সুযোগে তৃতীয় পক্ষের ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দ্বিতীয় দফা সংলাপে সংসদ ভেঙে দেয়া, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, তারা আরও দাবি উপস্থাপন করেছেন। আমরা বলেছি, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। তারা আরও সংলাপের দাবি জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অপর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সংবিধান পরিপন্থী ও সাংঘর্ষিক কিছু বক্তব্য তারা নিয়ে এসেছেন, যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। সংলাপ এখানে শেষ। শিডিউল ঘোষণার পর তারা যদি কোনো ব্যাপারে আবার বসতে চান, আপত্তি নেই।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কাছে এমন তথ্য দেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হয়েছিল, তার মধ্যে শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেই দ্বিতীয় দফায় সংলাপ হয় ক্ষমতাসীনদের। বুধবার সকাল ১১টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া এ সংলাপ শেষ হয় দুপুর ২টার কিছু পরে। বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হয়।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার কথা অনুযায়ী, প্লেয়িং লেভেল ফিল্ড, সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা, প্রকৃত রাজবন্দিদের মুক্তির বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে মেনে নেয়া হয়েছে।
তবে নির্বাচনকালী সরকারের বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট যে প্রস্তাব দিয়েছে তা মেনে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক ঐক্যের নেতা এস এম আকরাম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের প্রতিনিধিদলে ছিলেন— আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
গত ১ নভেম্বর গণভবনে বহু আলোচিত প্রথম দফা সংলাপ শেষে গণফোরাম সভাপতি কামাল বলেছিলেন, এ আলোচনায় বিশেষ কোনো সমাধান তারা পাননি। আর জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট নন।
এরপর গত ৪ নভেম্বর আবার সংলাপ চেয়ে কামালের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হলে বুধবার বেলা ১১টায় ‘ছোট পরিসরে’ সংলাপের সময় দেয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
গতকাল মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের জনসভা থেকে মির্জা ফখরুল ঘোষণা দেন, সংলাপে তাদের দাবি পূরণ না হলে ৮ নভেম্বর রাজশাহী অভিমুখে রোড মার্চ করবেন তারা। রাজশাহীতে ৯ নভেম্বর ঐক্যফ্রন্টের জনসভা হবে।
আর সমঝোতার আগেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার ঘোষণা দেন ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির এই নেতা।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে সংলাপের ‘ফলাফল’ জানানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন