ওপি বাতিলের সিদ্ধান্তে আরও ‘অসুস্থ’ স্বাস্থ্যখাত

স্বাস্থ্যখাতের ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) বন্ধ করেছে সরকার। এতে এসব কর্মসূচিতে কর্মরত প্রায় ২৫ হাজার পরিবারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। স্থবির হয়ে আছে অনেক জরুরি সেবা। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের তেল, চালকের বেতন, এমনকি সিভিল সার্জনের গাড়ির তেলসহ নানান সরবরাহ বন্ধ। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টি কর্মসূচির পাশাপাশি উন্নয়নের নানান খাত বন্ধ। সবাই তাকিয়ে আছে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে।
যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, জরুরি সেবার কিছুই বন্ধ থাকবে না। উন্নয়ন খাতেও বরাদ্দ বন্ধ থাকবে না। জরুরি সেবাগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জেলা উপজেলাকে অধিদপ্তরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। তারা সরাসরি বরাদ্দ পাবে। এতে ব্যয় কমবে, কমবে দুর্নীতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমার স্টাফ ওপির। তিনি সব কাজ করলেও বেতন পাচ্ছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে এটি আমাকে বিব্রত করে। দুর্নীতি হচ্ছে বলে সরকার এগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, এখন সমাধানও করছে না।’
একই অবস্থা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দপ্তরের এক কর্মকর্তার। তার গাড়ি কেনা অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায়। আগের সরকারের আমল থেকেই মন্ত্রণালয়ের কাজে এটি ব্যবহার হয়। তবে খরচ আসে অপারেশনাল প্ল্যান থেকে। এখন অপারেশনাল প্ল্যান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাড়ির তেল ও মেইনটেন্যান্স নিজের পকেটের টাকায় করতে হয়। অপারেশনাল প্ল্যান বন্ধে সরকারের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও বিরক্ত।
অপারেশনাল প্ল্যান বন্ধে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী কমিউনিটি ক্লিনিক। কর্মীদের বেতন নেই, ওষুধ সরবরাহ নেই। অথচ সাধারণ মানুষের চাহিদার শেষ নেই। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবায়ও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তাদের অনেক কিছু এই অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায়।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহরুবা পান্না বলেন, ‘আমাদের এনসিডি কর্নার, আই ভিশন সেন্টার, বিভিন্ন পুষ্টি কার্যক্রম যেমন ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো, হাসপাতালের জিপ গাড়ি, গাড়িচালকের বেতন ও তেলের খরচ- এসব অনেক কিছুই বন্ধ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও উন্নয়ন খাতে আরও কিছু বরাদ্দ আসতো, গত এক বছর এসব বন্ধ। সামনে রাজস্ব খাতে এসব সংযুক্ত করে কতটুকু ম্যানেজ করতে পারবো, সেটা দেখার বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে আগে ওপির মাধ্যমে যে পরিমাণ বরাদ্দ আসতো, ঠিক সেই পরিমাণ বরাদ্দ দিলে সমস্যা নেই। আমরা ম্যানেজ করতে পারবো।’
মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন এ কে এম আবু সাঈদ বলেন, ‘উপজেলাগুলোতে যে গাড়ি দেয়া আছে, ওপি বন্ধের কারণে গাড়ির চালকের বেতন বন্ধ এবং তেল খরচ নেই। এনসিডি কর্নার তথা নন কমিউনিকেবল ডিজিজগুলোর ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। ওপির পরিবর্তে সরকার ভিন্ন চিন্তা করছে। রাজস্বখাতে নেবে হয়তো। এখন মাঝের এ সময়টা একটু কষ্ট হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোট ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যান আছে। বিভিন্ন খাতের এসব অপারেশনাল প্ল্যানের ২৫ হাজার কর্মী বেতন পাচ্ছেন না। বেতন কবে হবে, সেটা বলাও মুশকিল। সরকার এ নিয়ে কাজ করছে।’
উপজেলাগুলোতে যে গাড়ি দেওয়া আছে, ওপি বন্ধের কারণে গাড়িচালকের বেতন বন্ধ এবং তেল খরচ নেই। এনসিডি কর্নার তথা নন কমিউনিকেবল ডিজিজগুলোর ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্তি সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘অপারেশনাল প্ল্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে জরুরি সেবার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় এবং কর্মরতদের বেতন-ভাতা দিতে নতুন একটি ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে পাস হবে। এটির মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর আর এভাবে ডিপিপি হবে না। তবে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে বিশেষ কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আলাদা ডিপিপি করবে।’
তিনি বলেন, ‘জরুরি সেবার আওতাভুক্ত যেসব অপারেশনাল প্ল্যানে চলতো- ওষুধ, পথ্য, সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় জনবল। এগুলো সামনের দিকে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা উপজেলা তাদের বাজেটে প্রস্তাব করবে, সে আলোকে বরাদ্দ যাবে, তারা খরচ করবে। আগের মতো আর উন্নয়ন খাতে থাকবে না। অপারেশনাল প্ল্যান বা ডিপিপি হবে না। এতে দীর্ঘসূত্রতা কেটে যাবে। ব্যয়ও কমবে।’
সূত্র: জাগো নিউজ

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন