ওবামা মাঠে নামায় ডেমক্র্যাট শিবিরে স্বস্তি

ডেমক্র্যাটদের বিজয়ের পথ সুগম করতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ৭ দিন আগে মাঠে নেমে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভোটারদের হাস্যরসের মধ্যে বলেছেন, আমি কাউকে শত্রু ভাবি না। সকলেই আমার বন্ধু-সহকর্মী। সকলকে নিয়েই আমেরিকা। তাই সামনের নির্বাচনের বৈতরণীও পাড়ি দিতে হবে কঠোর বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই। অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীসহ সবধরনের সামগ্রী উৎপাদন ও পরিবহনের যে সমস্যা-সংকট, তা শুধু আমেরিকায় নয়, গোটাবিশ্বে বিরাজ করছে।

রবিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচনী ময়দানে তার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি ছিল জর্জিয়া। হ্যাটসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন গেটওয়ে সেন্টারের নির্বাচনী সমাবেশে ওবামা বললেন, ইউএস সিনেট প্রার্থী হিসেবে রিপাবলিকান প্রার্থী হার্শেল ওয়াকার ভালো একজন ফুটবল খেলোয়াড়-এটি অস্বীকারের উপায় নেই। তবে রাজনীতির ময়দানে তিনি একেবারেই যোগ্য নন। জনগণের মাঝে থেকে তৈরী হওয়া সংগঠকরাই পারবেন যোগ্য প্রতিনিধিত্ব করতে। এক্ষেত্রে পুনরায় জয়ী হবার যোগ্যতা রাখেন ডেমক্র্যাট প্রার্থী সিনেটর ওয়ারনক। এ সময় ৭ হাজার অধিক ভোটারের সকলেই বিপুল করতালিতে গোটা এলাকা মুখরিত করে তোলেন।

উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই হাজারো জনতা সমাবেশ স্থলে জড়ো হয়ে ওবামার সান্নিধ্য পাবার অপেক্ষায় ছিলেন। ওবামা বক্তব্য প্রদানের আগে ও পরে যতটা সম্ভব বেশী সংখ্যক মানুষের সাথে হাত মিলিয়েছেন। সকলকে অভিভূত করেছেন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোটের ময়দানে সরব থাকার জন্যে। এ সময় জর্জিয়া স্টেট গভর্ণর প্রার্থী বহুল আলোচিত স্ট্যাসী আব্রামসও ছিলেন ওবামার পাশে। ওবামা স্ট্যাসীকে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন রাজনীতিক হিসেবে তাকেও বিপুল বিজয় প্রদানে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। 
ওবামা বলেছেন, দলীয় বিভাজনের উর্ধ্বে থাকতে হবে এবং ব্যালট যুদ্ধে বিবেচনায় রাখতে হবে প্রার্থীর যোগ্যতাকে। তাহলেই মহল বিশেষের সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এগিয়ে চলা সম্ভব হবে। ট্রাম্পের নামোল্লেখ না করে ওবামা বলেন, কিছু লোকের দায়িত্ব-জ্ঞানহীন আচরণে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হুমকির সম্মুখীন। এটা কারো জন্যই শুভ নয়। সবকিছুকে সামনে রেখেই যোগ্য প্রার্থীকে জয় দিতে হবে যারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব অটুট ও সম্মান অটুৃট রাখতে সক্ষম।

উইসকনসিন এবং মিশিগানের নির্বাচনী ময়দানে বক্তব্যের পর জর্জিয়ায় ওবামার উদাত্ত আহবানে নিরপেক্ষ ভোটারের মধ্যে সাড়া বাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে। এসব সূত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, আরো কদিন আগে ওবামাকে মাঠে নামানো হলে ডেমক্র্যাটদের অবস্থা এতটা নাজুক হতো না। কারণ, বর্তমান সংকটের কথা ডেমক্র্যাটরা গুরুত্বের সাথে উপস্থাপনের পর তা থেকে পরিত্রাণের পন্থা নিয়ে কথা বলেননি। অভিবাসন সমস্যার সমাধান, গর্ভপাত বিরোধী আইন বাতিলের সুস্পষ্ট বক্তব্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে কার্যকর পরিকল্পনার ব্যাপারেও ডেমক্র্যাটরা ভোটারকে সঠিক বার্তা দিতে সক্ষম হননি। অধিকন্তু তারা ট্রাম্পের মত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে জনমনে সৃষ্ট হতাশাকে আরো উষ্কে দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।

হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেসের উভয়কক্ষে ডেমক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও  গত দু’বছরে প্রত্যাশার পরিপূরক তেমন কোন কাজ করতে সক্ষম হয়নি বাইডেন ও তার প্রশাসন। কেন এমনটি ঘটেছে, কেন জনজীবনের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠাতে পারেনি-তার ব্যাখ্যা না দিয়ে উল্টো রিপাবলিকানদের আক্রমণের পন্থা অবলম্বন করায় ভোটের ময়দানে সিদ্ধান্তহীনরা আরো হতাশ হয়েছেন। এ অবস্থার অবসানে ওবামার বক্তব্য কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে বলে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলো মন্তব্য করেছে।

জানা গেছে, নির্বাচনের দুদিন আগে পর্যন্ত ওবামা মাঠে থাকার পরিকল্পনা নিয়েছেন। ডেমক্র্যাটিক পার্টির নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, ওবামাই একমাত্র দলীয় নেতা যিনি অন্যপক্ষকে রাগান্বিত না করে বিবেকসম্পন্ন ভোটারকে ডেমক্র্যাটদের পক্ষে টানতে সক্ষম। হাস্যরসের মধ্যদিয়ে ওবামা জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করতেও সিদ্ধহস্ত।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওবামার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সংখ্যা ১৩৩.৪ মিলিয়ন তথা ১৩ কোটি ৩৪ লাখ। এরাও ওবামার আহবানে সাড়া দিয়ে নির্বাচনী ময়দানে সরব হবেন বলে সকলে আশা করছেন।