কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ
কওমি মাদ্রাসাকে রাজনীতিমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্থায়ী কমিটি। দেশের প্রচলিত কোনো ধরনের রাজনীতিতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা যুক্ত হতে পারবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।
রবিবার যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়াও হেফাজতের ডাকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কওমি অঙ্গনের অস্থিরতা রোধ, এই মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থার সুরক্ষা এবং আলেমদের মান-মর্যাদা বজায় রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় নানামুখী দীনি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালানোর লক্ষ্যে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সভা থেকে সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ঘরোনার গ্রেপ্তারকৃত আলেমদের মুক্তি দাবি করা হয়েছে। তাদের এই সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো হবে বলেও জানানো হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আল-হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান।
সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়
১। কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে একমাত্র আল-হাইআতুল উলয়া। আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন এক বা একাধিক বোর্ড কিংবা কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত ব্যতীত পৃথকভাবে কওমি মাদ্রাসা বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে না।
২। কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে মর্মে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৩। আল-হাইআতুল উলয়ার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য এবং কওমি মাদ্রাসা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন পাঁচ বোর্ডের পাঁচজন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া থেকে পাঁচজন এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত পাঁচজনের সমন্বয়ে সর্বমোট ১৫ জনের একটি ‘বাস্তবায়ন সাব-কমিটি’ গঠিত হবে।
৪। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসার যে সকল নিরীহ ছাত্র, শিক্ষক, আলেম-ওলামা, ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রমজান মাসকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারের কাছে তাদের মুক্তি দেয়ার দাবি করা হয়। একইসঙ্গে নিরীহ আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হয়রানি না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।
৫। পবিত্র রমজান কুরআন তেলাওয়াতের মাস। কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বালা-মুসিবত ও মহামারি দূর হয়। তাই রমজানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে হিফজ ও মক্তব বিভাগ খুলে দেয়ার জন্য এবং রমজানে পর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য সরকারের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করা হয়।
৬। আল-হাইআতুল উলয়ার আজকের সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করার জন্য তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্যরা হলেন- মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা মুফতি জসীমুদ্দীন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী, মাওলানা ছফিউল্লাহ, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মুসলেহুদ্দীন গহরপুরী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মুফতি নূরুল আমীন, মাওলানা মুফতি জসীমুদ্দীন।
এছাড়াও ছিলেন বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গার সভাপতি মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন, মহাসচিব মাওলানা শামসুল হক; আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসের সভাপতি মাওলানা সুলতান যওকের প্রতিনিধি মাওলানা ফুরকানুল্লাহ খলীল, মাওলানা আব্দুল হালীম বুখারীর প্রতিনিধি মাওলানা উবায়দুল্লাহ হামযাহ; আযাদ দীনী এদারায়ে তা‘লীম এর সভাপতি মাওলানা জিয়াউদ্দীন এর প্রতিনিধি মাওলানা এনামুল হক, মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছীর; তানজীমুল মাদারিসের সভাপতি মাওলানা মুফতি আরশাদ রাহমানী, মহাসচিব মাওলানা ইউনুস এবং জাতীয় দীনী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সভাপতি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের প্রতিনিধি মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, মহাসচিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন