কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন সিরিয়ার ডাক্তাররা
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার ডাক্তাররা। সিরিয়ায় কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের পাশে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এর এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরীয় চিকিৎসক ডা. মুনির হাকিমির নেতৃত্বে একদল ডাক্তার এখন রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দিতে কক্সবাজার এসেছেন। চলতি বছর মে মাসে ম্যানচেস্টারে হামলায় হতাহতদেরও চিকিৎসা করেছিলেন তারা।
২৫ সেপ্টেম্বর রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে।
হাকিমির দলে যোগ দিয়েছেন ওয়েলসের ডাক্তার ড. ডেভিড নট। গাজা, লিবিয়া ও ইরাকের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের কিভাবে চিকিৎসা করতে হবে তা নিয়ে স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দেবেন ড. হাকিম। সফরে আসার আগে মিডল ইস্ট আইকে তিনি বলেন, ‘সেখানে অনেক গর্ভবতী নারী রয়েছে। কারও হাড় ভেঙে গেছে, কেউ দগ্ধ। সিরিয়ায় আমরা যেই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সেখানে সেটি প্রয়োগের চেষ্টা করবো।’
তিনি বলেন, সিরিয়ান হিসেবে আমাদের যখন সাহায্য দরকার ছিলো, তখন বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। আমরাও এখন সবার পাশে দাঁড়াতে চাই। রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক মেডিক্যাল সাহায্য দরকার।’
কক্সবাজারে এখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। তাদের সবারই বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাব রয়েছে। নেই স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। তাই অসুস্থ হওয়া ঝুঁকি তাদের অনেক বেশি। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে অস্থায়ী ক্লিনিকে এমনও দেখা গেছে যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মারধরের কারণে পুরো পঙ্গু হয়ে গেছে কেউ কেউ। এছাড়া একজনকে রক্তবমিও করতে দেখা গেছে। চর্ম ক্যানসারে ভুগছেন তিনি। তাদের চিকিৎসা করবেন হাকিমের দল। তার দলে রয়েছেন অ্যানাথেটিস্ট, ফার্মাসিস্ট, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, গাইনোকলোজিস্ট।
এদিকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমারের আচরণকে বর্ণবাদ বলেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।রোহিঙ্গাদের অধিকার ও আইনি স্বীকৃতি পুনর্বহাল এবং দেশের বৈষম্যমূলক নাগরিক আইন সংশোধন করার তাগিদ দিয়েছে তারা। দুই বছরের গবেষণার ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) অ্যামনেস্টি প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে দুই বছরের গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরেন অ্যামনেস্টির কর্মকর্তারা।
ব্রিটিশ চিকিৎসক ড, শমিলা জুলফিকার বলেন, এখনও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। তিনি বলেন, ‘আমাদের যাত্রাপথে একজন অসুস্থ ও পানিশূন্যতায় ভোগা বৃদ্ধা নারীকে দেখেছি আমরা। আমাদের কাছে যা ছিলো তা দিয়ে তাকে সাহায্য করেছি। নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, পাগলের মতো আচরণ করা এক রোহিঙ্গা নারীকে দেখেছেন তারা। তার স্বামীর হাতে ছিলো ৩ মাস বয়সী মৃত সন্তান। সেই মুহূর্তটি তার জীবনে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বলে জানা ড. শমিলা।
স্বাস্থ্য ও ত্রাণ সহায়তা সংস্থার জোট ডেভি নট ফাউন্ডেশন ও সিরিয়া রিলিফের যৌথ মিশনের হাকিমি ও তার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দল বাংলাদেশে আসছেন। চলতি বছর জানুয়ারিতেও সিরিয়ায় কাজ করেছেন হাকিমি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের যতটা গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ততটা দেওয়া হচ্ছে না। আরও পদক্ষেপ ননেওয়া জরুরি। তবে সিরিয়ার ঘুতায় পরিস্থিতি আরও খারাপ বলে জানান তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন