‘কফিন খুলবেন না, তাদের ভালো স্মৃতিগুলোই মনে রাখুন’
নজরুল ইসলাম, পিয়াস রয় ও আলিফুজ্জামান। ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার ১১ দিন পর তাদের মরদেহ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছেছে।
শনাক্ত করতে না পারায় গত ১৯ মার্চ মরদেহ তিনটি দেশে আনা সম্ভব হয়নি। ওই দিন ২৩ হতভাগার মরদেহ দেশে এনে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আক্ষেপ থেকে যায় নজরুল ইসলাম, পিয়াস রয় ও আলিফুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের।
প্রিয়জনের একটু সান্নিধ্য পাওয়া, তার শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে না পারার যন্ত্রণা আরও বেশি পীড়া দিতে থাকে স্বজনদের।
খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতীর আলিফুজ্জামান আলিফের মা মনিকা বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, ‘তোমরা আমার জ্যান্ত ছেলেকে এনে দাও। যদি না পারো, তবে মরদেহ এনে দাও। তা না পারলে পোড়া ছাই দাও। আমার বাবার পোড়া ছাই বুকে নিয়ে আমি ঘুমাব।’
পাগলপ্রায় মায়ের সেই আকুতি শেষ পর্যন্ত যেন সৃষ্টিকর্তার কানে পৌঁছায়। মরদেহ তিনি ফিরিয়ে দিলেন ঠিকই কিন্তু মায়ের বুকের ধনের প্রিয় মুখটি আর যেন দেখা হলো না।
কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি (টিইউ) হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিজেন শ্রেষ্ঠ তিন হতভাগার মরদেহ শনাক্ত প্রসঙ্গে গতকাল জানান, মরদেহগুলো পুরোপুরি আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তাদের দেহের সফট টিস্যুগুলো সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গেছে। হাড়গুলো কালো হয়ে গেছে। তাই তাদের শনাক্তে বেগ পেতে হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাতে মরদেহগুলো যখন শনাক্ত করে কফিনে ঢুকানো হয় তখন নেপালে অবস্থানরত আশিক কাঞ্চন নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘কফিনগুলো খুলবেন না, তাদের ভালো স্মৃতিগুলো মনে রাখুন।’
নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে বৃহস্পতিবার সকালে মরদেহ তিনটি হস্তান্তর করা হয়। সকাল ৯ টায় দূতাবাসে নজরুল ইসলাম ও আলিফুজ্জামানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০৭২ ফ্লাইটে মরদেহ তিনটি ঢাকায় আনা হয়। পরে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর হ্যাংগার গেটে ডেথ সার্টিফিকেটসহ মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরে নজরুল ইসলামের মরদেহ রাজশাহী, পিয়াস রায়কে বরিশাল এবং আলিফুজ্জামানকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে, গত সোমবার বিমান বাহিনীর একটি কার্গো বিমানে করে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের মরদেহ দেশে আনা হয়। তারা হলেন- আঁখি মনি, বেগম নুরুন্নাহার, শারমিন আক্তার, নাজিয়া আফরিন, এফএইচ প্রিয়ক, উম্মে সালমা, বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, অনিরুদ্ধ জামান, রফিক উজ জামান, পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, খাজা সাইফুল্লাহ, ফয়সাল, সানজিদা ও নুরুজ্জামান।
গত ১২ মার্চ (সোমবার) ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস-২১১ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিমানটি বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১০ বাংলাদেশি আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নেপালের বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। এরপর আহত সাত বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হয়। বাকি তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও ভারতে পাঠানো হয়।
বিমানটিতে মোট ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, নারী ২৮ ও দুজন শিশু ছিল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন