করমুক্ত আয়সীমা পুরুষের সাড়ে ৩ লাখ টাকা, নারীর ৪ লাখ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পুরুষ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ এবং নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ দুই ক্যাটাগরিতেই করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কোম্পানি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য শ্রেণির করদাতা; বিশেষ করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা, করহার ও করধাপ আগের মতোই অপরিবর্তিত আছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে সম্মানিত করদাতাদের প্রকৃত আয় কমেছে। তবে করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সম্মানিত করদাতাদের কর দিতে স্বাচ্ছন্দ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করভার লাঘব হবে বিধায় করদাতারা নিয়মিতভাবে কর পরিশোধে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করা যায়। পুরুষ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ এবং নারী ও ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। একইসঙ্গে সর্বনিম্ন করহার ৫ শতাংশ ও সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।
এদিকে, বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির করদাতা, গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার করমুক্ত আয়সীমা আরও ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবন্ধীর ক্ষেত্রে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা গত অর্থবছর ছিল চার লাখ ৫০ হাজার টাকা।
গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছর ছিল চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের করদাতার করমুক্ত আয়সীমা এক লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা গত অর্থবছর ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব করপোরেশনের বাইরের অন্যান্য এলাকায় কোম্পানি করদাতা ছাড়া অন্য করদাতাদের জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম কর যথাক্রমে পাঁচ হাজার, চার হাজার ও তিন হাজার টাকা প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ন্যূনতম করের বিদ্যমান কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, অংশীদারত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে। অথচ সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে- এমন সব করদাতার ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে ই-টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা প্রায় ৮৮ লাখ, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি হলেও তা আশানুরূপ নয়। উন্নত বিশ্বের মডেল অনুসরণে ব্যক্তিপর্যায়ে নতুন করদাতার মাধ্যমে করজাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপেয়ার (টিআরপি) বিধিমালার প্রস্তাব করছি। ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপেয়ারের মাধ্যমে ই-রিটার্ন প্ল্যাটফর্মে আয়কর রিটার্ন দাখিলের আগে এ বছরে আমরা টিআইএনধারী করদাতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নতুন রিটার্ন দাখিল করাতে সক্ষম হবে।
এর আগে জাতীয় সংসদে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় বাজেট অধিবেশন। অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের ১৫তম বাজেট এটি।
নতুন অর্থবছরের এ বাজেট প্রস্তাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, চারটি মূল স্তম্ভের ওপর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন