করোনার প্রকোপ কমছে, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছেই
করোনা মহামারির প্রকোপ যখন ধীরে ধীরে কমে আসছে, তখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ জনের মতো। এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাসায় চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা বরং হাসপাতালের তুলনায় আরো বেশি।
এদিকে দেশে গত একদিনে নতুন করে ১৬৩ জন ডেঙ্গুরোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ রোগীই রাজধানীর বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত এ বছর ডেঙ্গুতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ৫৭ জন।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোলরুমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪৩ জন পর্যন্ত ছিলো। কিন্তু জুনে এই সংখ্যা তিনশ’রও কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এরপর জুলাইয়ে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ২৮৬ জন, আগস্টে সাত হাজার ৬৯৮ জন এবং সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই হিসাবে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের ধারা একই গতিতে আছে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ১৪ হাজার ৮৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে গত কয়েক মাস ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ঊর্ধ্বমুখী। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। ১৫ সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে শূন্য থেকে একবছর বয়সী আছে দুই শতাংশ। শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সি ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি ২৪ দশমিক ২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৩০ বছর বয়সি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সি ৭ দশমিক ১ শতাংশ, ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ২ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
কিন্তু ডেঙ্গুর মাত্রা বৃদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষ আবহাওয়ার প্রাদুর্ভাবকে দায়ী করেই ক্ষান্ত দিয়েছেন। নিয়ন্ত্রণে তাদের নেই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। তারা ভরসা করে আছেন কবে আবহাওয়া অনুকূলে ফিরবে। তখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, যেভাবে কাজ চলছে তাতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এজন্য আরো জনবল দিয়ে এলাকাভিত্তিক কাজ করা দরকার। কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গুর সঠিক তথ্য পাচ্ছি না। এভাবে কাজ করলে ডেঙ্গু যাবে না। সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও সিটি করপোরেশনকে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে পরিদর্শনে যেতে হবে। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডকে আলাদা ব্লকে ভাগ করে নিতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উত্তর সিটিতে দুই লাখ হোল্ডিং রয়েছে। এজন্য ১২০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছি। একজনের দায়িত্বে দিনে ১২০টি বাড়ি পড়বে। সপ্তাহে প্রতিটি বাড়ি একবার ভিজিট করা হবে। ভিজিটরের দায়িত্ব হবে ডেঙ্গুর লার্ভা থাকলে সেই খবর সিটি করপোরেশনে পৌঁছানো। এভাবে কাজ করলে বাসাবাড়িতে ডেঙ্গু থাকবে না। কলকাতায় এই মডেল ব্যবহার করে সফলতা পাওয়া গেছে।’
গতকাল দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন ১৬৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪০ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন।
গত এক দিনে নতুন ১৬৩ জন নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৯১ জনে। ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৮৮ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২০৩ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ২২৮ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৩ হাজার ৯৮০ জন রোগী। ডেঙ্গুতে এ সময়ে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন