করোনার মাঝেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আয়
করোনাভাইরাস মহামারির মাঝেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২.৫৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, একক মাস হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। গত জুন মাসে প্রবাসীরা ১৮৩ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। জুন মাসে এটি ছিল রেকর্ড। তবে সেই রেকর্ড ভেঙে জুলাইতে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাইতে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে এক বিলিয়ন ডলারের মতো।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বাড়ার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের সবোর্চ্চ রেকর্ড ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। অবশ্য এ রেকর্ড হয়েছে গত মঙ্গলবার (২৮ জুলাই)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই করোনার সময়ে প্রবাসীরা যত রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, এর আগে কখনোই কোনও অর্থবছরের পুরো সময়েও এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর কোনও অর্থবছরে এত রেমিট্যান্স আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই— এই চার মাসে ৭০২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এরমধ্যে এপ্রিল মাসে এসেছে ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। মে মাসে এসেছে ১৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। জুন মাসে এসেছে ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার এবং জুলাই মাসে এসেছে ২৬০ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বলেন, ‘একক মাস হিসাবে গত জুলাইতে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সময়োপযোগী ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে।’ তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘ঈদের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। তবে করোনার কারণে হুন্ডি পথ আগের তুলনায় অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। আর এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শেষদিকে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। এরপর বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন রিজার্ভে ছিল এক বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ বিলিয়ন (এক হাজার ৮২০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের শুরুর দিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার। এই অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ের (জুলাই-জুন) চেয়েও ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার(১৬.৪১ বিলিয়ন)।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স থেকে আয় করেছিল এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসেছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন