করোনা ভাইরাসে ‘ঘরে ফেরা’ কর্মহীনরা ৫ লাখ টাকা করে ঋণ পাবেন
কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) মহামারীতে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে ৫০০ কোটি টাকার একটি স্কিম হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘ঘরে ফেরা’ নামে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ৬ শতাংশ সুদে জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন কর্মহীনরা।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি বিভাগ থেকে তহবিল গঠন ও পরিচালনা নীতিমালা সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারী করা হয়।
এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংক তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক-অর্থাৎ শাখা, উপশাখা, এজেন্ট, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ ও আদায় করতে পারবে। প্রয়োজনে শাখাপ্রতি আউটসোর্সিং ঋণ ও আদায় কার্যক্রমে জন্য সহায়তা নিতে পারবে। তবে এ ঋণ প্রদান কার্যক্রমে এনজিও, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানকে ফেসিলিটেটর এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
এ স্কিমের আওতায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা যাবে। তবে কেউ খেলাপি হলে নতুন ঋণ নিতে ও সমন্বয় করতে পারবে না।
স্কিমের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ০.৫ শতাংশ সুদ বা মুনাফা হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। গ্রাহক পর্যায়ে সুদ বা মুনাফার হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ (সরল সুদ হারে)। এ সুদ হার সবার জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে কোনও জামানত গ্রহণ করা যাবে না। স্কিমের ১০ শতাংশ ঋণ পাবেন নারীরা।
স্বল্প পুঁজির স্থানীয় ব্যবসা, পরিবহণ খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারী যানবাহন ক্রয়, ক্ষুদ্র প্রকৌশল শিল্প, মৎস্য চাষ, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন, তথ্য প্রযুক্তি সেবাকেন্দ্র ও অন্যান্য সেবা পরিচালনাকারী কর্মকান্ড, বসতঘর নির্মাণ/সংস্কার, সবজি ও ফলের বাগান, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ফসল বিপণন খাতে এ ঋণ দেওয়া যাবে। এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করে এমন কর্মকান্ড, যেমন-ছোট ছোট ব্যবসা, বিশেষ করে ধান ভাঙানো, চিড়া/মুড়ি তৈরি, নৌকা ক্রয়, মৌমাছি পালন, সেলাই মেশিন ক্রয়, কৃত্রিম গহনা তৈরি, মোমবাতি তৈরি, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়-এমন ক্ষেত্রে এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রদান করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলো থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
ঋণের পরিমাণ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত তিন মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ২ বছর বা ২৪ মাস। ঋণের পরিমাণ ২ থেকে ৫ লাখ টাকার ক্ষেত্রে ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর বা ৩৬ মাস।
স্কিমের অর্থ নির্ধারিত খাতের বাইরে বিনিয়োগ করলে অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে জরিমানাসহ এককালীন আদায় করা হবে। গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে ৬ শতাংশের বেশি সুদ নিলে অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে জরিমানা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে শহরকেন্দ্রীক জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ হঠাৎ কর্ম হারিয়ে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এসব মানুষের অধিকাংশই এখন গ্রামে অবস্থান এবং মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব জনগোষ্ঠীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায়, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, গ্রামাঞ্চলে আয় উৎসারী কর্মকান্ড গতিশীল করতে স্বল্প সুদে প্রয়োজনীয় ঋণ নিশ্চিত করা আবশ্যক। এসব বিবেচনায় ৫০০ কোটি টাকার এ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে।
‘ঘরে ফেরা’ নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে গঠন করা এ তহবিলের মেয়াদ হবে ২০২৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে গ্রাহক পর্যায় থেকে আদায় কার্যক্রম স্কিমের মেয়াদ পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকবে।
এ স্কিমে সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক অংশগ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগে আবেদন করতে হবে। ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ও সক্ষমতার ভিত্তিতে তহবিল বরাদ্দ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি সক্ষমতা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে বরাদ্দ করা তহবিলের পরিমাণ পুনঃর্নির্ধারণ করতে পারবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর তহবিলের সমপরিমাণ অর্থায়ন করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন