কলারোয়ায় খেজুর গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত গাছিরা
সরদার কালাম, (দেয়াড়া) কলারোয়া : কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ানের সকল গ্রামাঞ্চলে আমন ধানের চাষাবাদের জমিতে, রাস্তার ধারে প্রতিটি যায়গায় খেজুর গাছ বিরাজমান!
সারি সারি, এলোমেলো অবস্থায়ও দেখা মেলে হাজার হাজার রসালো খেজুর গাছের!যে খেজুর গাছ বিভিন্ন ভাবে প্রকিয়া, পরিচর্যায় বেরিয়ে আসে আল্লাহর নিয়ামতের সুস্বাদু পানিও রস!
যেটাকে সাধারণত আমরা বলে থাকি খেজুরের রস!
কিন্তূ ইউনিয়নে এবছর আমন ধান একটু দেরিতে কাটাই, এবং আবহাওয়া মৌসুম স্বাভাবিক ভাবে না পাওয়াতে রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ কাটাতে দেরী হয়েছে দেয়াড়া ইউনিয়ানের বিভিন্ন্য এলাকায় বলে গাছিরা মন্তব্য করেন ।
তবুও শুরু হয়েছে কলারোয়ায় দেয়াড়া ইউনিয়নে শীতের পরশে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের লক্ষ্যে খেজুর গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত গাছিরা।
শীত মৌসুমে সৃষ্টির এ অন্যন্য রসের স্বাদকে সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে ইতোমধ্যে রস সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় খেজুর গাছ পরিচর্যা শুরু হয়েছে ইউনিয়ানের খোরদো গ্রামের মাঠ, উলুডাংগা, দলুইপুর,ছলিমপুর, মিরডাঙ্গা, পাকুড়িয়া, মাঠপাড়া, দেয়াড়ার মাঠসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ানের বিভিন্ন এলাকায়।
খেজুর রস সংগ্রহের জন্য কয়েকটি দফা অবলম্বন করতে হয় বলে জানান গাছিরা।
সেই প্রক্রিয়া প্রথম দফায় খেজুর গাছের উপরিভাগে প্রথমে গাছের পাতা কেটে ঝোড়া হয় বা গাছ উঠানো হয়!
কিছুদিন পর দ্বিতীয় দফায় গাছের উপরিভাগের একপাশে চাচ দেয়া হয়।
তৃতীয় দফায় কিছুদিন পর সেখানে সামান্য চোখের মতো কেটে খিলিন দেয়া হয়। মূলত চাচ দেয়া ও খিলিন দেয়ার পর থেকেই ভাড়ে রস আহরণ করা হয়।
পরবর্তীতে ২/৩ দিন পরপর খিলিনের উপরের ওই স্থানে সামান্য সামান্য কাটার অর্থাৎ, গ্রাম্য ভাষায় বলে থাকে চোখ উঠানোর ফলে সেখান থেকে খেজুর রস গড়িয়ে ভাড়ে পড়ে। এভাবেই খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। -এমনটাই জানালেন খেজুর গাছ কাটানোর কাজে নিয়োজিত গাছিরা।
খেজুরের রস পান করতে যেমন ভালো লাগে তেমনি সেই রস থেকে গুড় ও পাটালিও তৈরি করা হয়ে থাকে।
শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহে জন্য প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে চাষী বা গাছিরা।
ধানের কাজ শেষ করতেই এমনকি, এখনো শীতের তীব্রতা দেখা না মিললেও এরই মধ্যে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন ইউনিয়ানের অনেক গাছিরা।
তবে দেয়াড়া ইউনিয়নে খেজুর গাছ অনেকটা বিলুপ্তির পথে।
কয়েক বছর আগেও বাড়ির আঙ্গিনায়, ক্ষেতের আইলের পাশে কিংবা রাস্তার দুই ধারে খেজুর গাছের আধিক্য থাকলেও এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। যদিও সরকার বর্তমানে তাল ও খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে দেশব্যাপী।
তাছাড়া বন্যা দেখা দেওয়ায় অনেক খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
তারপরেও দেয়াড়া কাশিয়াডাংগা ও অন্যান্য বন্যা কবলিত এবং মৎস্য ঘেরে পানি থাকায়, তার ভিতরের খেজুর গাছ গুলো কাটা সম্ভব হচ্ছে না বলে ঐ এলাকার গাছিরা বলেন।
যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। খেজুর গাছ দির্ঘ বছর ধরে অত্যন্ত রস দেয় -এটাই তার বৈশিষ্ট্য।
শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি, পায়েশ ও অন্যান্য মিষ্টি সুস্বাদু খাদ্য খাওয়ার পালা পড়ে ।
এছাড়া খেজুরের পাতা দিয়ে আর্কষনীয় ও মজবুত পাটি তৈরী করা হয়, এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যবহার করা হয়। আবার খেজুর গাছের খাদি বা ডাটা দিয়েও রস ও ধান সিদ্ধের কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আরো আরেকটা উপাদান তৈরি দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে এমনকি শহরাঞ্চলে অবসর সময়ে মহিলাদের!
সেটা হচ্ছে খেজুর পাতা ও কাশফুল জাতির খড়ের বুন্নিতে, ফুলঝুড়ি,ডিমের খাঁচা এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় জিনিস পত্র! যেটা রপ্তানি হয় শহর থেকে বিদেশ পর্যন্ত।
ঐ সকল উপকরন গুলো তত্ত্বাবধানে ও সরবরাহের দায়িত্ব দেখা যায় খ্রিষ্টান ধর্মের ব্যবসায়ী মানুষ গুলো।
এব্যাপারে, জানতে চাইলে খোরদো মিশন পাড়ার থোমাস রায় বলেন, আমরা কাঁশফুল বা খড়গুলো এবং খেজুরের শুকনো পাতা গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের কাছে একটা মুল্য নির্ধারণ করে দিয়ে থাকি! এবং পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে, তাদের দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক জিনিস তৈরি করা হলে সঠিক মুল্য দিয়ে ক্রয় করি।
এবং সেগুলো আমরা শহর ও বিভিন্ন উপরি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করলে, তিনারা বিদেশেও রপ্তানি করে থাকেন বলে জানান খোরদো মিশনী থোমাস রায়।
ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো সাধারণ বসত বাড়িতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেটা অনেক টেকসই ও বজবুত দির্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। তৈরি জিনিসগুলো রঙের আলপোনা দিয়ে আকর্ষণীয় করা হয়।
এছাড়া খেজুর গাছ দিয়ে বসতি ঘরের মজবুত আড়াও তৈরি করা হয়ে থাকে।
সবমিলিয়ে শুধু রসের জন্য নয়, খেজুর গাছের গুনাগুন অপরিসীম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন