কলারোয়ায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা ও দুই নৈশ প্রহরী খুনের মামলা ৬বছর পর আদালতে ফাইনাল
সোনালী ব্যাংকের কলারোয়া শাখায় ডাকাতির চেষ্টায় বাধা দেওয়ায় দুই নৈশ প্রহরীকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার ৬ বছর পর আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে।
সিআইডি পুলিশের সাতক্ষীরা জোনের পরিদর্শক গাজী মো: লুৎফর রহমান অতি গোপনে গেল ২১ এপ্রিল অতীতে গ্রেপ্তারকৃত সকল আসামীদের অব্যাহতি চেয়ে এবং মূল ঘাতকদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন।
নিহত দুই আনসার কর্মী হলেন, কলারোয়া উপজেলার ঝাপা গ্রামের আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন ও হরিশপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে আসাদুর রহমান। বিগত ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই দুর্বৃত্তরা সোনালী ব্যাংকের কলারোয়া শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করলে নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে থাকা উপরোক্ত দুই আনসার কর্মী বাধা দিলে তাদেরকে জবাই করে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, উক্ত ব্যাংকের তৎকালিন ম্যানেজার মনোতোষ সরকার ১৪ জুলাই বিকাল পর্যন্ত ব্যাংকে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন শেষে বাড়িতে যান। পরদিন সকাল ১০টার দিকে ব্যাংকের আইটি শাখার রফিকুল আলম তাকে ফোনে জানান, ব্যাংকের ভবন মালিক গোলাম রব্বানি তাকে জানিয়েছেন ব্যাংকের গেট খোলা এবং ভিতরে নাইট গার্ড মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অফিসে যান এবং ঘটনা দেখেন।
এদিকে ঘটনার পরপরই তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরসহ পুলিশের অন্যান্য বিভাগ ঘটনাস্থলে যান। ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। দুই নৈশ প্রহরীর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাকাতির চেষ্টার বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জাম উদ্ধার করেন।
রাতে অজ্ঞাতদের আসামী করে ম্যানেজার মনোতোষ কুমার বাদী হয়ে ডাকাতির চেষ্টা ও হত্যা মামলা দায়ের করেন কলারোয়া থানায়। মামলা দায়ের করার পরপরই জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইমরান হোসেন তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। গ্রেপ্তার করেন কয়েকজনকে। এরপর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই লুৎফর রহমান দায়িত্ব পান।
পরবর্তীতে সিআইডির পরিদর্শক শেখ মেজবাহ উদ্দীন দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। তিনি বদলির পর অবশেষে সিআইডির পরিদর্শক গাজী মো: লুৎফর রহমান সর্বশেষ তদন্তকর্মকর্তা নিযুক্ত হয়ে ৬-৭ মাস ধরে মামলাটি তদন্ত করেন। এরপর গত মাসের ২১ এপ্রিল এই মামলার কোন ক্লু উদঘাটনে ব্যর্থ হয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেছেন।
এদিকে কলারোয়ার চাঞ্চল্যকর সোনালী ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা ও ডাবল খুনের ঘটনায় ওই বছরের ১৯ জুলাই কলারোয়ার লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের আজিবর রহমান, মির্জাপুর গ্রামের গোলাম হোসেন, ঝিকরা গ্রামের আবুল কাসেম ও মনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ২০ জুলাই সিংহলাল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, ২২ জুলাই কোটা শুভংকরকাটির আনসার আলী ও গদখালি গ্রামের জাহাঙ্গীর কবির, ৯ আগস্ট পাঁচপোতা গ্রামের গোলাম কুদ্দুস, পরের বছর ৩১ মে ইলিশপুর গ্রামের আব্দুল খালেক, ১৭ সালের পহেলা ডিসেম্বর সদরের গোবিন্দকাটি গ্রামের ইসমাইল গাজী, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট যশোর জেলার শার্শা থানার পশ্চিম কোটা গ্রামের বাবলু সরদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বহুলআলোচিত এই মামলার তদন্তকালে তদন্তকারি কর্মকর্তারা মোট ১১জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তেমন কোন তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি।
অপর দিকে এই হত্যাকান্ডের পর থেকে প্রভাবশালিদের ইন্ধন থাকার বিষয়টি নানাভাবে আলোচিত হলেও তা তদন্তকার্যে আসেনি। ফলে বছরের পর বছর এই হত্যা মামলা তদন্তের নামে ফাইল বন্দি ছিল। তবে তদন্তকারি কর্মকর্তাদের একজন জানিয়েছেন, এই হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত এমন একজন ঘাতক পার্শ্ববর্তী ভারতে অবস্থান করায় কিনারা করা যাচ্ছিল না। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় নানা কৌশলও অবলম্বন করা হয়। সেটিও সম্ভব হয়নি।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গাজী মো: লুৎফর রহমান ফাইনাল রিপোর্টে বলেছেন, ঘটনা সংক্রান্তে সার্বিক তদন্তে অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হলেও হত্যাকান্ডে জড়িত থাকা সংক্রান্তে কাউকে শনাক্ত করা সম্ভবপর না হওয়ায় এবং অদূর ভবিষ্যতেও কোন তথ্য উপাত্ত পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ থাকায় মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলপূর্বক সন্ধিগ্ধ গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে অত্র মামলার দায় হতে অব্যাহতি দানের আবেদনও জানানো হয়েছে।
তবে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গাজী লুৎফর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, মামলার সার্বিক কাগজপত্র পর্যালোচনা ও তদন্তপূর্বক বিগত ৬-৭ মাসের অভিজ্ঞতায় এ মামলার রহস্য উদঘাটন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করাও সম্ভব হচ্ছেনা। এজন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে মামলাটির ফাইনাল দেয়া হয়েছে। তবে তেমন কোন ক্লু সামনে আসলে পুণ:তদন্ত করা যাবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন