কাতারে জনশক্তি রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা

ভিশন-২০৩০ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। এই সময়ের মধ্যে দেশটি বিশ্বের সেরা দেশ হতে চায়। এটি তাদের জাতীয় লক্ষ্য। ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজকও কাতার। এখন আধুনিক সব স্টেডিয়ামসহ বিশাল নির্মাণযজ্ঞ চলছে দেশটিতে। ফলে দেশটিতে এখন বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হচ্ছে।

দেশটিতে নতুন করে জনশক্তি রপ্তানির আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশেরও। এই অবস্থায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমন্ত্রণ এসেছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন জাসেম আল থানীর আমন্ত্রণে তিনদিনের এ সফরে যাচ্ছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সফরকালে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধি করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তারা। বৈঠকে সামগ্রিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি ইস্যু গুরুত্ব পারবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. লুৎফর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে কাতারে দ্বিপক্ষীয় সফরে যান। এ ছাড়া ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক সভায় অংশগ্রহণের জন্য কাতার সফর করেন তিনি। যা দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটায়। আশা করা যাচ্ছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার ও সম্প্রসারিত হবে। এ ছাড়া কাতার থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়েও সফরে আলোচনা হবে।

সফরকালে কাতারের শ্রমমন্ত্রী, জ্বালানী ও শিল্পমন্ত্রী এবং কাতারের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন কাতার চেম্বার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ ছাড়া শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়ও আলোচনা করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি দোহায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুলের কার্যক্রমও পরিদর্শন করবেন।

তবে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে কাতারে আরো দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কাতার সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। মূলত মন্ত্রীর এই সফরে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে কাতারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, ২০২২ ও ২০৩০ সাল সামনে রেখে কাতারে নতুন যে শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারলে আগামী কয়েক বছরে সেখানে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে। তেলসমৃদ্ধ কাতারের মানুষের মাথাপিছু আয় এক লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের ওপরে। মোট জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ। এছাড়া সে দেশে কর্মসূত্রে ১৫ লাখ বসবাস করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এদের ৭৫ ভাগই আছেন নির্মাণ খাতের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তারা মাসে গড়ে বেতন-বোনাস মিলিয়ে অন্তত দুই হাজার রিয়াল (১ রিয়ালে ২৩ টাকা) আয় করেন।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাব অনুযায়ী, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার যখন নানা সংকটে, তখন গত কয়েক বছরে কাতারে বাংলাদেশিদের যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি কাতারে গেছেন। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ লোকই গেছেন গত পাঁচ বছরে। এদের মধ্যে শুধু একবছরেই (২০১৪ সাল) কাতারে ৮৭ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে যে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক লাগবে, তা আমাদের জানা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আছেন এমন কিছু বাংলাদেশিই কাতারে ভিসা-বাণিজ্য করছেন। এটি রোধ করা প্রয়োজন।’

কাতারের বাজারটিকে ভাল করে ধরার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বড় আকারে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আলোচনাটি চলছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী গত বছর কাতার সফর শেষে জানিয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার শ্রমিক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।’

ধারণা করা হচ্ছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী কাতারের এই সফরের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানির জট খুলবে।