কাদেরের চিকিৎসায় ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি ঢাকার পথে

জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠিকে আনা হচ্ছে। ভারতের এই চিকিৎসক আজ সোমবার বেলা ১২টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন।

ডা. দেবী শেঠিকে গ্রহণ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের পথে রওনা হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রোববারই বিএসএমএমইউর চিকিৎসক ও সরকারি পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল- ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে দেশের বাইরে নেয়া হবে। সেটি সম্ভব না হলে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসককে বিএসএমএমইউতে এনে তার চিকিৎসা দেয়া হবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডা. দেবী শেঠিকে আনার কথা ওঠে। শেষ পর্যন্ত আজ তাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এর আগে রোববার রাতে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসকদের তিন সদস্যের একটি দল ঢাকায় পৌঁছে।

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিক মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, সিঙ্গাপুর থেকে একজন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ, একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ও একজন টেকনিশিয়ান এসেছেন। তারা ওবায়দুল কাদেরের রিপোর্ট ও তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা একটু উন্নতি হয়েছে। এ কারণে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত দেখা হবে। যদি আরও উন্নতি হয়, তা হলে হয়তো এখনই দেশের বাইরে নেয়া হবে না। দেশের বাইরে নেয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে আজ দুপুরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

রোববার রাত সাড়ে ৯টায় বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার দেখভাল করার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাতে (রোববার) আর ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুর নেয়া হবে না। সোমবার শারীরিক অবস্থা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এদিকে জীবন শঙ্কায় থাকা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি পুরোপুরি চেতনা ফিরে পেয়েছেন। চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিতে পারছেন।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সোমবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তবে তিনি এও জানান, ওবায়দুল কাদের এখনও শঙ্কামুক্ত নন বলে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন।

রোববার সকালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সিসিইউর ২ নম্বর বেডে লাইফসাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সোমবার সকালে জানান, সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন- ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণভাবে চেতনা ফিরে পেয়েছেন এবং তিনি চিকিৎসকদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন।

শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ওবায়দুল কাদেরের লাইফসাপোর্টের যন্ত্রাদি খুলে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে লাইফসাপোর্টের জন্য যেসব চিকিৎসা সরঞ্জামাদি যুক্ত করা হয়েছিল, তা খুলে ফেলা হবে। সকাল ১০টায় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র খুলে ফেলা হতে পারে।’

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড আশা করছে, এই সময়ের মধ্যে পুরোপুরি চেতনা ফিরে পাবেন ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বিপ্লব বড়ুয়া জানান, রাতে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- ওবায়দুল কাদেরের ব্লাড সার্কুলেশন, হার্টবিট এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি এখনও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অথচ গতকাল একপর্যায়ে ওবায়দুল কাদেরের রক্তচাপ ৩৫-এ নেমে আসে।

সিঙ্গাপুরে নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা বিপ্লব বড়ুয়া জানান, দুপুরে চিকিৎসকদের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে জানানো হবে। তদুপরি সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আনা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় যাতে তা কাজে লাগানো যায়।

রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে তাকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে এনজিওগ্রাম শেষে ওবায়দুল কাদেরের হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ার কথা জানান চিকিৎসকরা।

সেতুমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, সকালে ফজরের নামাজ শেষে হঠাৎ করেই শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা অনুভব করেন মন্ত্রী মহোদয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসকরা তার মেডিকেল চেকআপ করেন। চেকআপ শেষে তাকে দ্রুত এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। পরে এনজিওগ্রাম শেষে চিকিৎসকরা জানান তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে।

ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য মো. শহীদুল্লাহ সিকদার রোববার দুপুরে বলেছিলেন, উনার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। আমরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি। তদুপরি তার পরিবার ও প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাকে বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের পক্ষ থেকে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিএসএমএমইউ কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন প্রিভেনটিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক, অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত ভৌমিক, অধ্যাপক ডা. একেএম আক্তারুজ্জামান, কার্ডিও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রেজওয়ানুল হক, অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, ডা. তানিয়া সাজ্জাদ প্রমুখ।

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে বিএসএমএমইউতে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।এ সময় তিনি ওবায়দুল কাদেরের শয্যার পাশে গিয়ে কাদের কাদের বলে ডাক দেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের দুই-তিন সেকেন্ডের জন্য চোখের পাতা নাড়েন। ওবায়দুল কাদেরকে দেশের বাইরে নেয়া হবে কিনা— নেতারা জানতে চাইলে সেই সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপাতত দেশের বাইরে নেয়ার দরকার নেই। এখানেই চিকিৎসা চলবে।’ প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলেন শেখ হাসিনা।

পরে বিকাল ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও তাকে দেখতে যান বিএসএমএমইউতে।