কারণ ছাড়াই চড়াও পেঁয়াজের দাম
মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আড়াই গুণ। খুচরা বাজারে ২৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। পাইকারি বাজারে পাঁচ কেজি পেঁয়াজের দাম যেখানে ছিল ২০/২১ টাকা সেই পেঁয়াজ এখন ৫৪/৫৫ টাকা। অথচ এই সময়ে পেঁয়াজের যথেষ্ঠ মজুদ রয়েছে বিভিন্ন আড়ৎ ও ব্যবসায়ীদের কাছে। সরকারের কাছেও রয়েছে পেঁয়াজ।
একমাস আগেও যে পেঁয়াজর দাম ২২/৩২ টাকা ছিল, সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০/৬৫ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ(টিসিবি) হিসাবেই এক মাসে পণ্যটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। শতাংশ হিসাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ১১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার টন পেঁয়াজ, যা আগের মাসের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।
দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৪ লাখ টন। ঈদুল আজহায়(কোরবানির ঈদ) অতিরিক্ত প্রায় ২ লাখ টন প্রয়োজন হয়। আর মোট চাহিদার প্রায় ১৭ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ৭ লাখ টন আমদানি করা হয়।
বছরের এই সময়ে কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ে। সেই চিন্তা করে চহিদার চেয়ে বেশি মজুদ করা হয়েছে। জমিতেও পেঁয়াজ নেই, যে বন্যার পানিতে নষ্ট হবে। এজন্য দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বুধবার(১৬ আগস্ট) বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, বস্তা হিসেবে দোকানদাররা বাছাই করা পেঁয়াজ কিনছেন হচ্ছে ৫২ টাকায়, বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা কেজি দরে। অপরদিকে বছাই ছাড়া পেঁয়াজের পাইকারি দাম কেজি প্রতি ৪২ টাকা। সেই পেঁয়াজ মান ভেদে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত।
দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা কিছুই বলতে পারছেন না। তাদের সাফ কথা, আমরা বেশি দামে কিনছি, তাই বেশিতে বিক্রি করছি।
রাজধানীর পেঁয়াজের পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মান ভেদে ৪৪ থেকে ৪৮ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৭-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কয়েক দিন আগের তুলনায় এ দাম ভারতীয় পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ৬-৭ এবং দেশি পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ৩-৫ টাকা কম।
টিসিবির দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১৪ জুলাই বাজারে মান ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ৩২ টাকা দরে। একমাস পরেই ১৪ আগস্ট বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। বুধবার(১৬ আগস্ট) রাজধানীর বাজারে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।
অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে সর্বনিম্ন ৬০ ও সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যা এক মাস আগে ২৭ থেকে ৩২ টাকা ছিল। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যা ছিল ২৫ টাকা।
আগের দরে কেনা হলেও বন্যার অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। সূত্র জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম একটু চড়া। যদিও ভারতীয়রা রান্নায় আমাদের মতো পেঁয়াজ ব্যবহার করেন না। কিন্তু মিসর কম দামে পেঁয়াজ ছাড়ার ঘোষণা দেয়ায় ভারতের বাজারে দাম কমে গিয়েছে।
আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে দর হাঁকিয়েছে বাংলাদেশের এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। ভারতে দাম বেড়েছে সেই অজুহাতে দেশেও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। তবে ভারত সরকার বলছে, আগামী মাসেই নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম আরও কমে যাবে।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতের বাড়তি দামের এই পেঁয়াজ বাংলাদেশে আমদানি হবে না। কারণ বর্তমানে দেশেই পর্যাপ্ত পরিমাণ পেয়াঁজ মজুদ আছে। ঈদ উপলক্ষ্যে যতটুকু প্রয়োজন তা আগেই চলে এসেছে। পাশাপাশি রয়েছে দেশিয় পেঁয়াজের যোগান। আগামী একমাস পরেই ভারতে নতুন পেঁয়াজ উঠবে। এরপরেই বাংলাদেশেও দেশিয় পেঁয়াজে ভরে যাবে বাজার। তাই দাম বৃদ্ধির কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
পাশাপাশি শুধু ভারত নয়, মিয়ানমার থেকেও আসছে পেঁয়াজ। ফলে দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন সবাই।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রাকৃতিক বা অন্য কোন দুর্যোগে কিছু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে মুনাফা করার জন্য সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের কাছে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও অসহায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ঠ সকলকে এ বিষয়ে কঠোর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাহলে পিঁয়াজসহ সব পণ্যর দাম নাগালের মধ্যে থাকবে। উপকৃত হবে সাধারণ জনগণ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন