কালিগঞ্জে ওসি দেলোয়ার হোসেনের অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায়
তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-বিদায়। মাত্র তিন অক্ষর। কিন্তু শব্দটির আপাদমস্তক বিষাদে ভরা। শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। এমন কেন হয়? কারণ এই যে,বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ। আর প্রত্যেক বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে নীল কষ্ট। বিদায় জীবনে শুধু একবারই নয়, এক জীবনে মানুষকে সম্মুখীন হতে হয় একাধিক বিদায়ের। সে-ই যে জন্ম লগ্ন থেকে বিদায়ের সূচনা, তারপর জীবন পথের বাঁকে বাঁকে আরো কত বিদায় যে অনিবার্য হয়ে আসে…।
মানবশিশু ভুমিষ্ট হয়েই কাঁদতে থাকে। কেন সে কাঁদে? সে তো কাঁদবেই। এতদিন মায়ের নাড়ির সঙ্গে তার যে বন্ধন ছিল সেটি যে আজ ছিন্ন হল। এভাবে জীবনের পরতে পরতে ছিন্ন হয় আরো কত প্রিয় বন্ধন!
তেমনি একটি বন্ধন ছিন্ন করে বদলী জনিত কারণে বিদায় নিতে হচ্ছে কালিগঞ্জ থানার সুযোগ্য অফিসার ইনচার্জ মানবিক (ওসি) দেলোয়ার হুসেন মহোদয় কে।
তিনি গত ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মাসে কালিগঞ্জ থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করার পর থেকে জেলার পুলিশ সুপারের সার্বিক দিক নির্দেশনায় থানার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাদক নির্মূল, সামাজিক ও মানবিক কাজে স্বতঃফুর্ত ভাবে অংশগ্রহণের জন্য উপজেলাবাসীর কাছে ইতোমধ্যে মানবিক পুলিশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। করোনাকালে তিনি খাদ্য সামগ্রী ও মাস্ক বিতরণ, সচেতনতা সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ব্যপক দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছে। থানা মসজিদের আয়োজনে বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেন, মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে খুবই গর্ববোধ করছি এবং গর্ববোধ করি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য হয়ে যারা এই করোনা মহামারীর দুঃসময় ও মানুষের পাশে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য। জনগনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। পুলিশ মানে জনগনের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা, আর পুলিশ মানে শত ভয়কে জয় করে মানুষের সেবা করা। পুলিশ মানে নিজে রাত জেগে ঘুমকে বিসর্জন দিয়ে অন্যকে ঘুমের স্বাদ দেওয়া।
পুলিশ মানে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবনদাতা। পুলিশ মানে ব্যথিত হৃদয়ে মানুষের মাঝে মিশে যাওয়া অংশীদার, পুলিশ মানে জনগনের যান মালের নিরাপত্তার দাবিদার। পুলিশ মানে করোনাকালে ভয়ে রাস্তায় ফেলে যাওয়া মানুষের পাশের দাফন দাতা, পুলিশ মানে নিজে ঈদে বাড়ি না গিয়ে অন্যকে ঈদের আনন্দ দেওয়া, পুলিশ মানে এই করোনাকালে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দেওয়া, তার পরেও আমরা অনেক খুশি, আমরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পেরে।
এসময় অন্যান্য বক্তারা বিদায়ী ওসির স্মৃতিচারণকালে বলেন- মানবিক পুলিশ অফিসার, সুযোগ্য উদ্যামী, ন্যয় পরোয়ান, মেধাবী, সৎ, সাহসী, কর্মঠ, দক্ষ নিরহংকারী কর্তব্য পরায়ন ও আন্তরিক ব্যক্তিত্ব দেলোয়ার হুসেন। তিনি সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে পরস্পারিক সৌহার্দ ও সুসম্পর্ক বজায় রেখে যে বিরল দৃষ্ঠান্ত স্থাপন হয়েছে তার জন্য বড় ও উদার মনের এই পুলিশ কর্মকর্তার অবদান অনস্বীকার্য। পুলিশ বাহিনীতে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকান্ড অনেক কমে আসবে। তিনি কালিগঞ্জ থানার সার্বিক অবকাঠাম উন্নয়ন, আসবাবপত্র তৈরী, থানা ক্যাম্পাসকে নিজের মত করে ফুলে ফলে সাজানো, জরাজীর্ণ থানার প্রাচীর আধূনিকায়ন করা, গাড়ীর গ্যারেজ, গোলঘর, ভিআইপি গেষ্টরুম, বাবুর্চিখানা, গোছলখানাসহ সকল দিক দিয়ে আধুনিকায়ন করেছেন।
শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) জুম্মার নামাজবাদে মসজিদের সহ সভাপতি ও থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং মসজিদ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাভাপতি শেখ সাইফুল বারী সফু’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সহ সভাপতি শেখ হুসাইন আহম্মেদ গোলাম, শেখ মোস্তফা মোহাম্মাদ আলী, শেখ আনোয়ার হুসেন প্রমুখ।
বিদায়কালে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে অফিসার ইনচার্জকে উপহার সামগ্রী দিয়ে ভূষিত করা হয়। মানবিক ওসির জন্য কান্না জড়িত কন্ঠে সকলেই দোয়া করে দেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন