কালিগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আগামী নির্বাচনে বিজয়ের অঙ্গীকারে বিজয় দিবস উদযাপিত
১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষনে স্বাধীনতার ডাক দেয়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীন পতাকার জন্য দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল।
যাদের রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি শাসন, শোষণের অবসান হয়েছিল। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সেই বীর সন্তানদের বিজয়ের ৫১ তম বার্ষিকীতে নানা অব্যবস্থাপনা ও জাতীয় পতাকা অবমাননার মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দিনভর নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করেছে উপজেলা বাসি।
দিবসটি পালন উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, থানা, প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা ইউনিয়ন পরিষদ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
দিনের কর্মসূচি এর মধ্যে ছিল ১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ভোর সাড়ে ৫টার সময় ৩১ বার তপধ্বনির মাধ্যমে কালিগঞ্জ থানা চত্বরে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা সরকারি, শিক্ষা ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বাসভবন, রাজনৈতিক কার্যালয় সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল৮টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী পার্কে অবস্থিত বিজয়স্তম্বে পুষ্প মাল্য অর্পণ করা হয়।
প্রথমে উপজেলা পরিষদের পক্ষে প্যানেল চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন। ওই সময় বিজয়স্তম্ভের সামনে জাতীয় পতাকা এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত রাখলেও পতাকা উত্তোলন ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরার নেতৃত্বে পুষ্প মাল্য অর্পণ করা হয়।
ওই সময় কোন মাইকের ব্যবস্থা না থাকায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে একে অপরের উপর হুমড়ি খেয়ে পুষ্প মাল্য অর্পণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় আগত পুষ্প মাল্য অর্পণকারী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে। উপজেলার বিভিন্ন ভবন আলোকসজ্জা সজ্জিত করলেও বিজয়স্তম্ভটি ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত ও অবহেলিত।
এরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন। থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুর রহমানের নেতৃত্বে থানার অফিসার ইনচার্জ হালিমুর রহমান বাবু পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন। কালিগঞ্জ প্রেস ক্লাব এর সভাপতি হামিদ এবং সহসভাপতি হাফিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক শাওন আহমেদ সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে সাংবাদিকরা পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
এরপর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি নিয়াজ কাউসার তুহিনের নেতৃত্বে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন, কালিগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষে সভাপতি সনত কুমার গাইন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, থানা বিএনপি’র সভাপতি এবাদুল ইসলাম, জাকের পার্টির সভাপতি শাহাজাহান, জাতীয় শ্রমিক লীগের আমির আলী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নুরুজ্জামান যামুনেতৃত্ব ছাড়াও কালিগঞ্জ সরকারি পাইলট হাই স্কুল, কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়, এম খাতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুশীলন, সোনালী ব্যাংক, ফায়ার সার্ভিস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পুষ্প মাল্য দর্পণ করেন।
রাত ১২টা ১ মিনিটে কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার নরিম আলী মুন্সি এবং সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট এর এর নেতৃত্বে দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে বিজয়স্তম্বে প্রশ্ন পুষ্প মাল্য অর্পণ শেষে কাক শিয়ালি সেতু সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মুরালে পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন। বিজয়স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মুরালে নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা এবং প্যানেল চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম অতিরিক্ত পুলার সুপার আমিনুর রহমান নেতৃত্বে পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন। সকাল সাড়ে৮টায় মহৎপুর সরকারি কবরস্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন।
সকাল ৯ টায় উপজেলা পরিষদ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা ওই সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কালিগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ হালিমুর রহমান বাবু, উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম।
ওই সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য এস,এম জগলুল হায়দার। এরপর একে একে মঞ্চে উঠে পড়েন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার নরিম আলী মুনশি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাহমুদা খানম মৃধা। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এস,এম জগলুল হায়দার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বিজয়ের মাসে বিজয়ের অঙ্গীকার নিয়ে আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ভোট দিয়ে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে। এরপর বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস সহ বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী স্কাউটদের সমন্বয়ে কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শনী হয়। সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়।
বেলা ১১ টায় স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বাদ জোহর সকল মসজিদে জঙ্গি কার্যকর্মের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির জন্য এবং জাতির শান্তি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল আড়াইটার সময় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মহিলাদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা ও শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৩টায় উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা প্রশাসন একাদশ বনাম মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয়ে এক প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলা পরিষদ মাঠ চত্বরে এক মনোজ্ঞ সংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক এর মাধ্যমে দিবসের সমাপ্তি ঘটানো হয়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন রাজনৈতিক দল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথক পৃথকভাবে নানান কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন