কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চার জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। ১৫জন চিকিৎসকের মধ্যে ৭জনই ডেপুটেশনে অন্যত্র কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এ যেন কাজীর গরু, খাতা-কলমে থাকলেও গোয়ালে নেই। রেডিওলজিস্ট না থাকায় এক্সরে সেবা দেওয়াও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগকৃত চিকিৎসকেরা শহরের নামি-দামী ক্লিনিকে বসে মোটা অংকের ভিজিট নিয়ে রোগী দেখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তিনটি উপজেলার মাঝে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি অবস্থিত হওয়ার কারণে উপজেলার দুই লাখ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার অন্যতম ভরসা স্থল।
এর পাশাপাশি পাশের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন ও ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার পাঁচবাগ ইউনিয়নের জনগোষ্ঠী ছাড়াও ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের লোকজন ও চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর দাবী ছিল এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করার। কিন্তু সে আশাতো পূরণ হয়নি; বরং এটি রেফার করা চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর হাসান জিকু জানান, বহি:বিভাগে প্রতিদিন ৪৭০ থেকে ৫০০ জন, জরুরি (ইমাজেন্সি) বিভাগে ১০০ থেকে ১৫০জন ও ৫০ শয্যার আবাসিক (ভর্তি) স্থলে ৫০ থেকে ৮৫ জন রোগী মিলে প্রায় ৬৫০ থেকে ৭০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসলেও ২ থেকে ৩ জন চিকিৎসক নিয়মিত চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষ। এ সময় অনেক নারী কোলে ছোট শিশু নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নারী ও শিশুদের জন্য নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুবীর নন্দী ও গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জুনিয়র কনসালট্যান্ট মরিয়ম আক্তারের নিয়োগ থাকলেও ডেপুটেশনে কাজ করছেন কিশোরগঞ্জ সদর-২৫০ শয্যার হাসপাতালে।
এ ছাড়াও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক মুহাম্মদ এখলাছ উদ্দীন ও চিকিৎসক সুমাইয়া তাবাসুম বৃষ্টিসহ এ চারজনই সেখানে প্রেষনে রয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক সুবীর নন্দী ও মরিয়ম আক্তার শহরের বেসরকারি হেলথ এইড হাসপাতালে নিয়মিত বসেন। আরও দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেনিয়া) মো.আলী জোবায়ের শরীফ ও চিকিৎসক সাদিয়া জাহান বৃষ্টি ডেপুটেশনে কাজ করছেন কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
একমাত্র হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল অফিসারও প্রেষণে রয়েছেন কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
চিকিৎসা নিতে আসা ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ গ্রামের রোগী মাওলানা মাযহারুল ইসলাম (৩৫), পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মতিউর রহমান(৭৮) ও প্যারাভাঙ্গা গ্রামের মজিবুর রহমান(৬৫)- এমন অনেকের সঙ্গে কথা হয় সেদিন।
তারা জানান সকাল ৯টা থেকে এসে বসে থাকলেও ১১টাতেও ডাক্তার দেখাতে পারছেন না। ওই দিন নারী চিকিৎসক তাহমিনা আক্তার লিপু ১৩ নং কক্ষে, চিকিৎসক মাহফুজা আক্তার মিস্টি ১৫ নং কক্ষে ও দন্ত চিকিৎসক সায়মা সুলতানা শিউলি ২০ নং কক্ষে রোগী দেখেছেন। অন্যদিকে ভর্তি রোগী দেখছেন আল-নুর আকাশ।
জেলা সিভিল সার্জন ডা.অভিজিত শর্মা এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির খবর জানেন না দাবি করে বলেন, ডাক্তার যায় না এটা তো আমি জানি না। যদি কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে থাকেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে যেখানেই থাকুক বেতন তো নিচ্ছেন। সুতরাং কাজ করতে হবে। ডেপুটেশন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. অভিজিত শর্মা বলেন, এটা ডিজি অফিসের বিষয়।
তবে এখানকার জনবল কাঠামোর প্রয়োজনে যদি আবারও প্রয়োজন হয়, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসকের জন্য আবেদন করে চিকিৎসক সংকট নিরসন করার আশ্বস্ত করেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন