কিশোরগঞ্জে কৃষিখাত সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের মানববন্ধন

কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করা, সার-বীজ, কীটনাশকসহ সকল কৃষি উপকরণের দাম কমানো, ক্ষেতমজুরদের সারাবছরের কাজের নিশ্চয়তা, ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, রেশন চালু সহ কৃষি খাতে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে (৬ এপ্রিল ২০২৫) রবিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর বাজারে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের উপজেলা আহ্বায়ক মোঃ আব্দুল আউয়াল এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক আলাল মিয়া, বাংলাদশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের সদস্য কামাল মিয়া, সংগঠক মারফত আলী, সংগঠক শাহিন মিয়া, সংগঠক জালাল উদ্দিন, সংগঠক রেশমা আক্তার প্রমুখ।
কিশোরগঞ্জ জেলা বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক আলাল মিয়া বক্তব্যে বলেন, ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো ছাত্র জনতার আত্মদান ও রক্তের বিনিময়ে আবারও বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শোষণ বৈষম্যের শিকার কৃষক ক্ষেতমজুরদের আশা আকাঙ্খাকে বাস্তবায়িত না করে বৈষম্যহীন দেশ নির্মাণ সম্ভব নয়।
অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে কৃষি সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে কৃষকের স্বার্থের পরিপূরক কৃষি খাত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কৃষিখাতে কৃষি উপকরণ ও ফসলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কিছু দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও কোম্পানির সিন্ডিকেট এবং মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা।
স্বাধীনতা পরবর্তী সকল সরকার এসকল পুঁজিপতি গোষ্ঠীর স্বার্থে কৃষি সংক্রান্ত নানা বিধিবিধান তৈরি করেছে। ফলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক-ক্ষেতমজুর-ভূমিহীন গরীব মানুষ সবসময় শোষিত ও বঞ্চিত হয়ে আসছে। কৃষক ক্ষেতমজুরদের অধিকার আদায়ে ইস্পাতদৃঢ় সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
মানববন্ধনে নিম্নোক্ত দাবির ভিত্তিতে সারাদেশে শক্তিশালী কৃষক ক্ষেতমজুর সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা করছেন।
কৃষকদের ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত কর। সিন্ডিকেট মধ্যস্বত্বভোগীদর প্রভাব মুক্ত কৃষকদের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোল। সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ সকল কৃষি উপকরণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিএডিসিকে কার্যকর কর। রাষ্ট্রীয় সার কারখানা চালু ও বৃদ্ধি কর। ভেজাল, কালোবাজারী রোধ কর।
কৃষি প্রধান এলাকাগুলোতে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোল। বন্ধ চিনিকল, পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু কর। একইভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কৃষি উপকরণ বিশেষত সার, কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা স্থাপন ও বৃদ্ধি করতে হবে।
ভূমি সংস্কার করে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। বিত্তশালীদের কাছ থেকে খাসজমি উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অকৃষি খাস জমি ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে ব্যবহার করার আইনগত বাধা দূর কর। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি, হয়রাণি, দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে।
কৃষি ঋণ মওকুফ ও সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার কর। এনজিও, মহাজনী ঋণের তীব্র শোষণ ও কিস্তির হয়রাণী বন্ধ কর। সরকারি ব্যাংক থেকে ক্ষেতমজুর ভূমিহীন চাষীদের ঋণের ব্যবস্থা কর।
ক্ষেতমজুরদের সারা বছরের কাজ দাও। ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু কর। সকল বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিতক্তা ও প্রতিবন্ধিদের মাসিক ভাতা ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
ইউনিয়ন হেলথ সেন্টারে এমবিবিএস ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগসহ পর্যাপ্ত ঔষধ চাই। হেলথ কার্ড চালু কর।
নদী ভাঙ্গন ও বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান কর। ইকোনমিক জোন, পাওয়ার প্লান্ট ও ইটভাটা নির্মাণের নামে কৃষি জমি, বন ধ্বংস ও ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করা চলবে না।
হাটে হাটে ইজারাদারী জুলুম, নির্যাতন, হয়রানী বন্ধ কর। ঢলতা প্রথার নামে অতিরিক্ত ফসল আদায় বন্ধ কর। গেটের মুখে সরকারী টোল চার্ট টাঙ্গাও।
উপকূলীয় ও হাওরে সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি এবং এম্বুলেন্স সার্ভিসসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কর। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের টাকা উপকূলীয় কৃষি ও কৃষকদের রক্ষায় ব্যয় কর।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএডিসিসহ ১৮টি সংস্থার কাজের জবাবদিহি চাই।প্রত্যেকটি সংস্থার কৃষকের সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটিয়ে প্রকৃতপক্ষে কৃষির উন্নয়নে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ কর।
প্রকৃত কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের তালিকা করে পরিচয়পত্র দাও।বিনামূল্যে ব্যাংক একাউন্ট খুলে ভর্তুকি,প্রণোদনার টাকা সরাসরি একাউন্টে দাও।
মাছ, মুরগী, গবাদিপশু খাদ্যের দাম কমাও।
কৃষি শ্রমিকদের কাজের ধরন, এলাকা, বয়স বিবেচনায় মজুরি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করতে হবে। কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
কৃষি শ্রমিকদের সকল পরিবহনে ভাড়া অর্ধেক করতে হবে। কৃষি শ্রমিকদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি গ্রামে লাইব্রেরিসহ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।
কৃষক ক্ষেতমজুরদের উক্ত দাবি আদায় এবং শোষণ-বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সারাদেশের কৃষক ক্ষেতমজুরদের ঐক্যবদ্ধ করে আলোচনা, মতবিনিময়, বিক্ষোভ, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন