কীটনাশক ব্যবহারে সাধারণ ভুল ও এর প্রভাব: কৃষি বিপ্লবের সামনে বড় বাধা

বর্তমান যুগে কৃষিতে কীটনাশকের গুরুত্ব অপরিসীম। কীটনাশক ব্যবহার না করলে ফসলের ক্ষতি এবং উৎপাদন হ্রাস নিশ্চিত। কিন্তু কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার না হওয়া ও প্রচলিত ভুল আচরণের কারণে কৃষি খাতের উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষক থেকে শুরু করে বাজার পর্যায় পর্যন্ত এই ভুল ধারণা ও অনভিজ্ঞতা মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে, যার প্রভাব পড়ছে ফসল, মাটি, পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যে।
সাধারণ ভুলগুলো কী?
১.অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ: অধিকাংশ কৃষক মনে করেন বেশি স্প্রে করলেই পোকামাকড় মারা যাবে, যা ভুল। এতে কীট প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে কীটনাশক কার্যকারিতা হারায়।
২.অবৈধ বা অনুমোদিত নয় এমন কীটনাশক ব্যবহার:বাজারে প্রচুর নকল ও অবৈধ কীটনাশক পাওয়া যায়, যা ফসলকে ক্ষতি করে এবং মানবদেহে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
৩.স্প্রে করার সময় সঠিক সুরক্ষা না নেওয়া:অনেকেই মুখে মাস্ক বা গ্লাভস ব্যবহার করেন না, যা সরাসরি বিষক্রিয়া ও শ্বাসকষ্টের কারণ হয়।
৪.কীটনাশক একসাথে মেশানো:অনুমোদিত নয় এমন দুটি বা ততোধিক কীটনাশক মিশিয়ে ব্যবহার কৃষির জন্য বড় ধরণের ক্ষতি ডেকে আনে।
৫.প্রয়োজনীয় ডোজ ও সময় মেনে না চলা:নির্ধারিত পরিমাণের বেশি বা কম প্রয়োগ, কিংবা সঠিক সময়ে স্প্রে না করা ফলন কমিয়ে দেয়।
৬.ফসলের রোগ ও পোকা সনাক্তকরণে অজ্ঞানতা:রোগ ও পোকা চিনতে না পারায় অপ্রয়োজনীয় ও ভুল কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়।
কী প্রভাব ফেলে এসব ভুল?
ফসলের উৎপাদন হ্রাস:রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় ফসল দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাটির গুণগত মান নষ্ট: অতিরিক্ত ও ভুল কীটনাশক মাটি ও মাটির জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে।
পরিবেশ দূষণ:নদী, মাটি ও বাতাসে বিষাক্ত রাসায়নিক জমা হয়, যা প্রাণিজগতের জন্য বিপজ্জনক।
মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি:কীটনাশকের কারণে ত্বক জ্বালা, শ্বাসকষ্ট, আলার্জি, ও দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের মতো রোগ দেখা দেয়।
কীটের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:পোকামাকড় একের পর এক কীটনাশকের প্রতি রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, যার ফলে পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়।
কীটনাশকের সঠিক ব্যবহারের উপায়
১.সঠিক কীটনাশক নির্বাচন:অনুমোদিত ও গুণগত মানসম্পন্ন কীটনাশক ব্যবহার করুন। দেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
২.নির্ধারিত মাত্রা মেনে ব্যবহার:লেবেলে উল্লেখিত ডোজ মেনে স্প্রে করুন।
৩.ব্যক্তিগত সুরক্ষা:স্প্রে করার সময় মাস্ক, গ্লাভস, চশমা ও পাকা জামা পরিধান করুন।
৪.সঠিক সময় নির্বাচন:সকালে বা সন্ধ্যায় স্প্রে করুন, যখন সূর্যের তাপ কম থাকে।
৫.স্প্রে করার দিক: বায়ুর বিপরীতে স্প্রে করুন, যাতে কীটনাশক পুরো ফসলের পাতা ও গাছের ওপর পড়তে পারে।
৬.বৈচিত্র্যময় পদ্ধতি প্রয়োগ:একই কীটনাশক বারবার ব্যবহার না করে পাল্টা পরিবর্তন করুন।
৭.সঠিক রোগ ও কীট সনাক্তকরণ:রোগ ও পোকা সঠিকভাবে চিনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
আমাদের করণীয়
দেশের কৃষি উন্নয়নে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। কৃষকদের মধ্যে সঠিক কীটনাশক ব্যবহারের তথ্য পৌঁছাতে হবে। এছাড়া বাজারে নকল ও অবৈধ কীটনাশক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সতর্কতা, সঠিক জ্ঞান ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণই পারে আমাদের কৃষি খাতকে সুরক্ষিত ও ফলপ্রসূ রাখতে।
লেখকঃ
মিঠুন সরকার
কৃষিবিদ ও সাংবাদিক
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাঃ সরকার এগ্রো যশোর

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন