কীভাবে সরকার গঠন করবেন ইমরান খান?
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের পার্লামেন্ট, যা ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি নামে পরিচিত, ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ যে ফল প্রকাশ করেছে, তাতেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি সাবেক ক্রিকেট তারকার নেতৃত্বাধীন দলটি।
এদিকে, অন্যতম প্রধান দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নতুন কৌশল অবলম্বন করতে যাচ্ছে পার্লামেন্টে পিটিআইকে চাপে রাখতে।
টিভিতে সম্প্রচারিত সংবাদ অনুযায়ী, পিপিপি নেতা সৈয়দ খুরশিদ শাহ পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আজ রোববার সাক্ষাৎ করবেন। এতে যৌথভাবে কৌশল প্রণয়ন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার দিনভর বিভিন্ন টেলিভিশনে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্ভাব্য মন্ত্রীদের নাম প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু পিটিআই সূত্র সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছে, তারা কোনো নাম নিয়ে আলোচনা করেনি। ইমরান খানের বানিগালা বাসভবনে দল নানা হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত।
পিটিআই নেতা শাফকাত মেহমুদ বলেন, বানিগালায় আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। সরকার গঠনের পর কী ধরনের সমস্যার আবির্ভাব হতে পারে, তা নিয়ে নেতারা সাধারণভাবে আলোচনা করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা কোনো মুখ্যমন্ত্রীর নাম আলোচনায় আসেনি।
মেহমুদ অস্বীকার করে বলেন, দল থেকে তাঁকে পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে মনোনীত করেনি।
সর্বশেষ ফল অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে পিটিআই পেয়েছে ১১৫টি আসন, পিএমএল-এন পেয়েছে ৬৪ ও পিপিপি পেয়েছে ৪৩ আসন।
এদিকে, যেসব পিটিআই নেতা একাধিক আসনে জয় পেয়েছেন, তাঁদের অতিরিক্ত আসন ছেড়ে দিতে হবে। ইমরান খান পাঁচ আসনে জিতেছেন—তাঁকে চারটি আসন ছাড়তে হবে। তক্ষশীলার গুলাম সারওয়ার খান দুই আসনে জয় পেয়েছেন। তাঁকেও একটি ছাড়তে হবে। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পারভেজ খাত্তাক কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক পার্লামেন্টে জয় পেয়েছেন। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আবার মনোনীত করলে কেন্দ্রীয় আসনটি ছাড়তে হবে। এসব কারণে পিটিআইর আসন কমে দাঁড়াবে ১০৯-এ।
পিটিআই নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা অন্যান্য ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করবে। এ ছাড়া পিটিআই নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা পিপিপি ও পিএমএল-এন নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা যাবেন না বা হাত মেলাবেন না।
সূত্র জানায়, পিটিআইর সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর তারিন বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। এমকিউএম-পি ছয়টি আসন জয় পেয়েছে আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দখলে আছে ১৩টি আসন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (জিডিএ) নেতা মমতাজ ভুট্টোর সঙ্গে জোট সরকারে যোগদানের ব্যাপারে কথা বলেছেন ইমরান খান নিজেই। এ ছাড়া পিএমএল-কায়েদে বা পিএমএল-কিউ চারটি আসনে জয় পেয়েছে। এদের সমর্থন পেতে পারে পিটিআই। বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) চারটি আসনে জয় পেয়েছে। পিটিআই তাদের সমর্থন আশা করছে।
পিটিআই যদি জিডিএ, এমকিউএম-পি, পিএমএল-কিউ ও আওয়ামী মুসলিম লিগের সমর্থন পায়, তাহলে আসন বেড়ে দাঁড়াবে ১২২-এ। তারপরও ১৫টি আসন দরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিয়েও সেই ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়।
অন্যান্য দলের মধ্যে ন্যাশনাল বেলুচিস্তান পার্টি-মেঙ্গাল (বিএনপি-এম) তিনটি আসন এবং জামহুরি ওয়াতান পার্টি, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসানিয়াতের একটি করে আসন রয়েছে।
পিপিপি ও পিএমএল-এন নির্বাচনী ফল প্রত্যাখ্যান করলেও তারা ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকবে বলে জানিয়েছে। মুত্তাহিদা মুজলিস-ই-আমল (এমএমএ) এ অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
পিএমএল-এনের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমরা পার্লামেন্টে বিরোধী পক্ষ হিসেবে জোরালো ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পিপিপির এক নেতা বলেন, তারা এখনো কোনো কৌশল ঠিক করেনি। দলের চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি শনিবার একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন, যাতে অন্যান্য দলের সঙ্গে নির্বাচন-উত্তর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা যায়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন