কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে আবারও সোনাহাট সেতুর পাটাতন ভেঙে যানচলাচল বন্ধ, দীর্ঘ যানজট


কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে আবারও মেয়াদ উত্তীর্ণ সোনাহাট সেতুর পাটাতন ভেঙে একটি পাথর বোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বিভিন্ন যানবাহনসহ স্থানীয়রা।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পাথরবোঝাই একটি ট্রাক সোনাহাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে ওঠে। এ সময় সেতুর স্টিলের অংশে পাটাতন ভেঙে ট্রাকটি আটকে যায়।
শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটকে যাওয়া ট্রাকটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যার কারনে সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এদিকে সেতুটির বিভিন্ন স্থানে পাটাতন ভেঙে গেছে এবং ট্যাংক জাম (লোহার পাত) খুলে গেছে। তবুও জীবন জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে মানুষজন।
জানা গেছে, সেতুটি দীর্ঘদিনের পুরানো ও মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ও কচাকাটা থানার কয়েক লাখ মানুষ। বৃটিশ শাসনামলে ১৮৮৭ সালে লালমনিরহাট থেকে ভারতের গৌহাটি পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়।
তারই অংশ হিসেবে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের ওপর নির্মিত হয় ১২০০ ফুট দীর্ঘ একটি সোনাহাট রেল সেতু। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রবেশ ঠেকাতে সেতুটির একটি অংশ ভেঙে দেয়া হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেতুটি মেরামত করে ভূরুঙ্গামারীর দক্ষিণের তিন ইউনিয়ন ও কচাকাটা থানা, কেদার, মাদারগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সচল করা হয়। বৃটিশ আমলে সেতুটির আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয় ১০০ বছর। সেই মতে সোনাহাট সেতুর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই।
নড়বড়ে সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে ঘটতে পাড়ে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা। বন্ধ হয়ে যেতে পারে সোনাহাট স্থলবন্দরের যাবতীয় কার্যক্রম।
সোনাহাট স্থলবন্দর এবং ভুটানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম ব্যাহত না হয় সেজন্য ঝুঁঁকিপূর্ণ রেল সেতুর পাশে দুধকুমার নদের দক্ষিণে ২০১৮ সালে ৬৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি নতুন পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ওই সেতুর নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ৪ দফা মেয়াদ এবং বরাদ্দ বৃদ্ধি করেও আজও কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফরিদুল, সাইফুর ও শহিদুল বলেন, এই রেল সেতু দিয়ে পাথরবোঝাই ট্রাক যাওয়ার সময় সেতুটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। এ ছাড়া সরু রেল সেতু দিয়ে যখন একটি ট্রাক যায় তখন পাশ দিয়ে অন্য কোনো যানবাহন যাওয়ার জায়গা থাকে না। এতে সেতুর দুই প্রান্তে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সোনাহাট স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আজিজুল, নুর ইসলাম ও আমজাদ হোসেন বলেন, সেতুতে একটি পাথর বোঝাই ট্রাক আটকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দুই পাড়ে শতাধিক ট্রাক আটকা পড়েছে। আজকে আমরা মাল ডেলিভারি দিতে পারলাম না। এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে। আর আমাদের লোকশানের পাল্লা ভারি হয়।
এ বিষয় জানতে কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম এর মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন