কুড়িগ্রামে দীর্ঘ ২৬ বছর সাজা ভোগ করা ব্যক্তির পাশে জেলা প্রশাসন

জমিজমা নিয়ে বিবাদে প্রতিবেশীকে খুন করার অপরাধে টানা ৩৬বছর ২মাস সাজা ভোগ করেন রংপুরের মঞ্জুর আলম। ৩৪ বছর বয়সে ২পূত্র সন্তান আর স্ত্রীকে রেখে কারাগারের জীবন শুরু হয় তার। এরপর পৃথিবীর জমকালো আলো-বাতাস ছেড়ে তাকে সোজা কারাবাসে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। একসময় সেই জীবনটাকেই মেনে নিয়েছিলেন তিনি।

বর্তমানে বয়স তার ৬০ বছর। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে এসে চমকে যান মঞ্জুর আলম। সবকিছুই পাল্টে গেছে। থমকে আছে শুধু তার স্মৃতিময় ৩৬টি বছর।

মঞ্জুর আলম জানালেন, ‘জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে বের হয়ে প্রথমে আতংক অনুভব করি। বাইরে এত লোকসমাগম, বাড়ীঘর, যানবাহন দেখে চমকে উঠেছি। যখন জেলখানায় ঢুকি তখন রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে একটা গাড়ী আরেকটা গাড়ীকে পাশ কাটাতে পারতো না। এখন দেখি বিশাল রাস্তা হয়েছে। হয়েছে বিশাল বিশাল ভবন। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে। আতংক অনুভব করছি।’

গত ১১ ডিসেম্বর রংপুর পৌরসভার হাবীবনগর এলাকার মৃত: মহির উদ্দিনের পূত্র মঞ্জুর আলম দীর্ঘ কারাবাসের পর কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পান। ১৯৯৭ সালে মহামান্য আদালতের রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর বাইরে বের হয়ে কি করবেন সেই বিষয় নিয়ে হতাশ ছিলেন মঞ্জুর আলম। বাড়ীতে গিয়ে অভাবের সংসারে ঢুকে কোন আনন্দই পাননি বলে জানান তিনি। এত বছর পর স্ত্রী-সন্তানদের দেখে তার মনে কোন উচ্ছ¡াস জাগেনি। একটা ঘোরের মধ্যেই যেন বিচরণ করছেন তিনি।

এরকম পরিস্থিতিতে তার অসহায়ত্বের কথা জেনে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ তাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য পাশে দাঁড়ান। তিনি কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মঞ্জুর আলম জেলখানায় দীর্ঘ সময় ধরে ওয়েল্ডিং-এর কাজ করতেন। তার বড় ছেলে সুরুজ আলম রংপুর ট্রাক স্টান্ডে ওয়েল্ডিং-এর কাজ করে। ছেলের সাথে কাজ করার সুযোগ করে দিতে জেলা প্রশাসক সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে মঞ্জুর আলমকে ৪০ হাজার ৭৬০টাকার উপকরণ কিনে দেন। যার মধ্যে রয়েছে ড্রিল মেশিন, ওয়েল্ডিং মেশিন, রিং-ডাল সেট, ¯øাইড মেশিনসহ অন্যান্য উপকরণ।

কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার আবু সায়েম জানান, মঞ্জুর আলম খুব সাদাসিধেভাবে থাকতেন। তিনি রান্নাবান্না করা, হস্তশিল্পের কাজ, ইলেকট্রিসিটি ও প্লাম্বারের কাজ জানতেন। তাকে বিভিন্ন কাজে পাওয়ায় যেতো। সে রংপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলে অবস্থান করার পর শেষ সময়টিতে কুড়িগ্রাম কারাগারে কাটিয়েছেন।
সদ্য কুড়িগ্রাম কারাগারে যোগদান করা জেল সুপার সফিকুল আলম জানান, মঞ্জুর আলম সাজা ভোগের পর মুক্তি পেয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন বাইরের দুনিয়ায় গিয়ে কি কাজ করবেন। তার মত অসহায় লোকের পাশে জেলা প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়াতে আমরা খুবই খুশি হয়েছি।

মঞ্জুর আলমের পূত্র সুরুজ আলম মোবাইলে জানান, বাবাকে পেয়ে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। বাবার মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। বেশিরভাগ সময় তিনি আনমনা হয়ে থাকেন। তার স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে। আমরা দু’ভাই বাবাকে দেখে শুনে রাখছি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, দীর্ঘ কারাভোগের পর মঞ্জুরুল আলম কিছুটা অন্তর্মুখী হয়ে আছেন।

পরিবারে তার ছোট ছেলে অণার্সে পড়াশুনা করছে। বড় ছেলের আয়ে কোনভাবে তাদের সংসার চলছে। তার পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জেনে আমরা চেয়েছি তিনি কাজের মধ্যে থেকে সংসারে উপার্জনের মাধ্যমে কর্মমুখী থাকুন। সেই চিন্তা থেকে জেলা প্রশাসন থেকে তাকে ৪০ হাজার টাকার উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আশা করছি এতে তাদের পরিবারে স্বাচ্ছল্য ফিরে আসবে।