কুড়িগ্রাম রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের অপচেষ্টা

কুড়িগ্রামের উলিপুর থানা চত্বরে বিএনপি’র দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উলিপুর উপজেলা পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম (৩৮) নিহত হয়েছেন। ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় থানা চত্বরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ২৮ ডিসেম্বর ২০জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। যার মামলা নাম্বার-২৫। পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে বিএনপির একাধিক নেতার দাবি প্রেম ঘটিত অপহরণের ঘটনা রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে গায়েলের চেষ্টা চলছে।

নিহত আশরাফুল ইসলাম উপজেলার পৌর এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের দয়ালপাড়া গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভীরুল ইসলামের সমর্থক বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তাসভীরুল ইসলাম এবং রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। থানার গোল ঘরে উভয় পক্ষের কয়েকজন নেতাকর্মীদের মধ্যে বিবাদমান একটি অরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা চলছিল।

একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে উপস্থিত যুবদল নেতা আশরাফুল সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করেন। এতে মারপিটের মাঝে পড়ে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আশরাফুলের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ার পরপরই উপজেলা শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাসভীর গ্রুপের বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা খালেকের সমর্থক আমিনুল ইসলামের মালিকানাধীন শুভেচ্ছা হোটেলে ভাঙচুর করে।

এছাড়াও বেঠকে উপস্থিত থাকা পৌর শহরের বাসিন্দা কৃষকদল নেতা আবু জাফর সোহেল রানা এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজলের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা পুলিশ থেকে অতিরিক্ত সদস্য পাঠানো হয়।

আশরাফুলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তা সংঘর্ষে আহত হয়ে হয়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। তারা বলছে,‘ আশরাফুল সম্ভবত স্ট্রোক করেছিলেন। থানার গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দুই পক্ষের মারামারি দেখার সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ আলোচনার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে আশরাফুল মাটিতে পড়ে যায়। আমাদের লোকজন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

মামলার এজাহারভূক্ত ৫নং আসামী মোতলেবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাঁধলেও তা রাজনৈতিক রঙ লাগানো হয়েছে। আমি ঘটনার সময় জেলা বিএনপির নবাগত আহবায়কের অনুষ্ঠানে জেলা শহরে থাকলেও আমাকে আসামী করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

আমার মত আরো অনেককে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আসামী করা হযেছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’

সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর এ মুর্শেদ বলেন, ‘ সংঘর্ষের ঘটনার পর একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। বেশ কয়েকজন আহত রয়েছেন।’ নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকা প্রশ্নে তাৎক্ষণিক কোনও তথ্য জানাতে পারেননি সিভিল সার্জন।

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগাঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক বলেন, ‘একটি কুচক্রি মহল অপহরণের ঘটনা রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। অথচ থানায় অভিযোগের কপি পর্যন্ত সংরক্ষিত। সংঘর্ষ চলাকালে আমার নেতা-কর্মীরা জেলা শহরের মিটিংয়ে উপস্থিত থাকলেও তাদেরকে শত্রুতাবশত আসামী করা হয়েছে। অন্যায়ভাবে তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়েছে। আমি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূরক শান্তি দাবি করছি।:

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ একটি প্রেম ঘটিত বিষয় মীমাংসার জন্য থানায় দুদিন আগে বসা হয়েছিল। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় গতকাল আবারো বসলে উভয়পক্ষের মধ্য কথা কাটাকটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে সেই সংঘর্ষে রাজনৈতিক মোড় নেয়। নিহতের পরিবার ২০জনকে আসামী করে মামলা করেছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।