কুড়িগ্রাম পৌরসভায় লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া,নামমাত্র প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা
শুধু নামেই প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। কিন্তু বাস্তবে নেই কোন
নাগরিক সেবার নুন্যতম সুযোগ সুবিধা। কুড়িগ্রাম
পৌরসভার বেশিরভাগই সড়কের বেহাল দশায় প্রতিনিয়ত নাজেহাল
হতে হচ্ছে পথচারীদের। বরাবরই মতোই দ্রæত সমস্যা সমাধানের
আশ্বাস পৌর মেয়রের।
দেশ স্বাধীনের পর ২৭দশমিক ২০বর্গ কি.মি.আয়তন নিয়ে
১৯৭২সালে স্থাপিত কুড়িগ্রাম পৌরসভা। এরপর ২০০৬সালে প্রথম
শ্রেণিতে উন্নিত হয় এই পৌরসভার। প্রায় দু’লাখ মানুষের
বসবাস এই পৌরসভায় রয়েছে জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপার
কার্যালয়,জেলা কারাগার,সদর থানা,পুলিশ ফাঁড়ি, সরকারি-
বেসরকারি হাসপাতাল,ক্লিনিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাট
বাজার।
জেলার প্রাণ কেন্দ্রে ব্যস্ততম কুড়িগ্রাম ২৫০শয্যার জেনারেল
হাসপাতালের সড়কের জরাজীর্ণ অবস্থা। এই রাস্তা দিয়ে চলাচলে
প্রতি মূহুর্তে হাজারো ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে
রোগী ও সাধারণ মানুষকে। রোগী নিয়ে সরকারী কিংবা
বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার প্রধান সড়কের করুণ অবস্থার কারণে
চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পৌরবাসীসহ সাধারণ
মানুষকে। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে গাড়ির ঝাঁকিতে রোগীরা
আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা
জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার দিন কাটে
পৌরবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়,দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় শহরের
গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল সড়ক,গাড়িয়াল পাড়া, রৌমারী পাড়া,গড়ের
পার,খেজুরের তল,হরিকেশ মোড়, হাটির পাড়,ভেলাকোপ,মাটিকাটার
মোড়, নীলারাম,মোগলবাসা সড়কসহ গুলো ছোট বড় খানাখন্দে
বিপর্যস্থ অবস্থা বিরাজ করছে।এসব সড়কের কোথাও কোথাও
সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে কোথাও খোয়া
কোথাও মাটি বেরিয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে
জলাবদ্ধতার কারণে এসব সড়ক দিয়ে চলাচল অনুপযোগি হয়ে পড়ায়৷
প্রায় সময় দূর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত যানবাহনের
ক্ষতি হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন চালকগণ।
শাপলা চত্বর হয়ে আদর্শ পৌর বাজার, হাসপাতাল পাড়া,হাটির পাড়,
গাড়িয়াল পাড়া,মাটি কাটার মোড়সহ শহরের পানি নিষ্কাশনের
ব্যবস্থা নাজুক অবস্থা। এতে একটু বৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসক
কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন,হাসপাতাল পাড়া সড়কসহ দ:
হাসপাতাল পাড়া,হাটির পাড়,স্বাধীন পাড়াসহ অধিকাংশ ওয়ার্ডের
বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার শিকার হন।এছাড়াও পৌরবাসীর জন্য নেই
পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা। ফলে সড়কের উপর এবং ড্রেনের পাশেই
ময়লা আবর্জনা ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন পৌরবাসী।
হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা মোশাররফ মিয়া বলেন, আমরা নামমাত্র
এক নং পৌরসভা পেয়েছি। কিন্তু কোন নাগরিক সেবার বালাই
নেই এখানে।
জেসমিন আকতার বলেন,হাসপাতাল যাওয়ার রাস্তা দেখে মনে এই
রাস্তায় এখন কোমায় চলে গেছে। রোগী ও স্বজনদের এই রাস্তা
দিয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা আর নোংরা
পানিতে চলাচলের জন্য চুলকানি,ডায়রিয়া,জ্বর, সর্দিকাশিতে
আক্রান্ত হতে হচ্ছে।
অটোচালক নুরু মিয়া বলেন,পৌরসভার কোন রাস্তা যে ভালো
আছে সেটাই মনে পড়ে না। সব রাস্তার বেহাল দশা। আমরা পৌর কর
নিয়মিত দিয়ে থাকি। কিন্তু নাগরিক সেবা পাচ্ছি না। প্রায়
সময় অটো রিকশার গøাস,নাট বল্টু,বিয়ারিং ভেঙে যায়। এতে
আমাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির
বাজারে রোজগার কমছে শুধু রাস্তার কারণে।
হাটিরপাড়ের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী বলেন, সরকার দলীয় মেয়র
টানা দুবার পেয়েছি পৌরবাসী। কিন্তু দৃশ্যমান উন্নয়নের
নামমাত্র আমাদের পৌরসভায় নেই। দিন যতই যাচ্ছে ততই এই পৌর
এলাকায় বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। একটু বৃষ্টি হলে
ড্রেনের পানি দিয়ে রাস্তা তলিয়ে যায়। এমন নোংরা পানিতে
ভিজে স্কুলে যেতে হয় বাচ্চাদের। আমাদের দূর্ভোগের কথা কাকে
বলবো? মেয়র,কাউন্সিলররা তাদের নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত
রাজা মিয়া বলেন,এমন মেয়রের জন্য সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত সরকারের
উপর। হাসপাতাল পাড়ার কোন লোক মারা গেলে সেই লাশ কবরস্থান
পর্যন্ত কাঁধে করে হেটে যাবার উপায় নেই শুধু রাস্তার দূর্দশার
কারণে।
মর্জিনা বেগম বলেন,কিছু দিন আগে রিভারভিউ স্কুল থেকে
মাটিকাটার রাস্তাটি এমপির বাড়ির গেট পর্যন্ত ঠিক করেছে।
অথচ রাস্তার বাকি অংশ জরাজীর্ণ অবস্থা থাকলেও ঠিক করার কোন
উদ্যোগ নেই। এটাই হলো পৌরসভার উন্নয়ন। যে উন্নয়ন
সাধারণ মানুষের জন্য নয়।
গফুর মিয়া বলেন,পৌরসড়ার সড়কের পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও
নেই কোন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। পৌরসভার রাস্তার প্রশস্থ কম। অথচ
পৌরসভার তদারকির অভাবে প্রায় সময় রাস্তার উপর বালু, ইট ফেলে
রাখা কিংবা রোগী বহন গাড়ি রাস্তায় দ্বাঁড় করানোর কারণে
যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী পৌরবাসীর। এই ভোগান্তিতে আরও
কয়েকগুণ বাড়ে কোন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের সময় এই সরু
রাস্তায় গাড়ির কয়েক গুণ চাপ বেড়ে যাওয়ায়।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন,এই
পৌরসভায় ১৮৬কিলোমিটার রাস্তা এবং প্রায় ৬০কিলোমিটার
ড্রেন রয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্ব¡পূর্ণ নগর পরিকল্পনা উন্নয়ন প্রকল্পের
আওতায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার রাস্তা
এবং জলবায়ু প্রকল্পের অধিনে দু’কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দুই
কিলোমিটার ড্রেন সংস্কার করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খুব দ্রæত
সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে জানান
তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন