কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌরসভা নির্বাচনে জোয়ার নৌকার মেয়র প্রার্থীর

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভাটির আয়তন ১৩ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটার। এখানে ৩২ হাজার লোকের বাস। মোট ভোটার ১৭ হাজার ১৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৫৮৯ ও মহিলা ৮ হাজার ৫৯১ জন।

অনেক হেভিওয়েট নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আবদুল মালেক। গত ৫ বছরে পৌরসভা এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের সাথে মহামারী করোনাকালেও পৌরবাসীর পাশে থাকায় দ্বিতীয়বারের মতো তিনি নৌকার বৈঠা সামলানোর দায়িত্ব পেয়েছেন।।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবার আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মজুমদারকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। তার একান্ত প্রচেষ্টা ও পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়নের ফলে ২০১৮ সালের এপ্রিলে পৌরসভাটি ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়।

নাঙ্গলকোট প্রেস ক্লাবের সভাপতি মজিবুর রহমান মোল্লা জানান, প্রতিষ্ঠার শুরুতে পৌরসভায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছু ছিল না। আবদুল মালেক মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌরসভায় উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন। তার হাত ধরেই পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বিভিন্ন রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করেছেন। ড্রেন নির্মাণ করেছেন। পৌরসভার শোভাবর্ধনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফুলের গাছ লাগানোসহ সড়কবাতির ব্যবস্থা করেছেন। তবে, পৌরসভায় শিশুদের জন্য কোনো পার্ক নেই। নেই পৌর কবরস্থান।

নাঙ্গলকোট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর সহযোগিতায় পৌরসভায় ১৬৩ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। পৌরসভায় এখন আর কোনো কাঁচা রাস্তা নেই।’

টানা দ্বিতীয়বার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রথম দফায় মেয়র পদে দায়িত্ব পালনে সফলতা-ব্যর্থতার কথা ও পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে আগামীদিনে করনীয় সম্পর্কে জানাতে প্রতিবেদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র আবদুল মালেক।

তিনি বলেন, গত নির্বাচনের সময় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার প্রায় সবই পূরণ করেছি। রাস্তাঘাট, ড্রেন, পুল-কালভার্ট নির্মাণ করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ড এবং বাজারের রাস্তা ঢালাই এবং প্রশস্ত করেছি। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বাগান তৈরি করেছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসন ও মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ অব্যাহত রয়েছে।

পৌরসভায় প্রয়োজনীয় ডাস্টবিন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, ময়লা-আবর্জনা রাখার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের জন্য প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেবা পেতে পৌরবাসীকে কোনো হয়রানির শিকার হতে হয় না। আমাদের অভিভাবক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সহযোগিতায় ও নির্দেশনায় এ পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৌরসভায় চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন কাজ করেছি। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, এবারের নির্বাচনে পৌরবাসী ভোটের মাধ্যমে আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।’

ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নানা পদক্ষেপ নিয়ে পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পেরেছি। তারপরও কেউ দুর্নীতিতে জড়ালে ক্ষমা করা হবে না।’

অবৈধ দখলদারিত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পৌরসভায় খাসজমি কারও দখলে নেই। খাল ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে।’

কর আদায় প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘পৌরবাসী নিয়মিত কর পরিশোধ করছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে তারা কর প্রদানে উৎসাহী হয়েছেন।’ ‘সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানি বন্ধে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা, সেমিনার করে জনগণকে সচেতন করছি।

শিক্ষার মানোন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নেয়া উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। পৌরবাসী যেন চিকিৎসাবঞ্চিত না হয়, সেজন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসক উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।’

পৌরসভা নিয়ে আগামী দিনের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুল মালেক বলেন, ‘দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অবহেলিত পৌরবাসীকে একটি আধুনিক মডেল পৌরসভায় রূপ দিতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আমি যে কাজ করেছি তাতে পৌরবাসী সন্তুষ্ট। পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে পৌর এলাকার সীমানা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলো থেকে কিছু গ্রাম পৌরসভায় যুক্ত করব। শিশু ও বয়স্কদের জন্য একটি পৌরপার্ক নির্মাণ করব। চলমান প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে সমাপ্ত করব। এজন্য আমি পৌরবাসীর কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করছি।

উল্লেখ্য, আগামী ১১ এপ্রিল নাঙ্গলকোট পৌরসভায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।