কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহতদের বাড়িতে শোকের ছোয়া ও তদন্ত কমিটি গঠন

কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিন স্কুলছাত্রীর বাড়িতে বইছে শোকের মাতম। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

জানা যায়, বুধবার দুপুর সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর রেলক্রসিংয়ে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তিন স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সবাই বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।

মারা যাওয়া স্কুলছাত্রী হলো- সদর দক্ষিণের বারপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর এলাকার ওমান প্রবাসী দুলু মিয়ার মেয়ে তাসপিয়া (১২), মাসুম মিয়ার মেয়ে মিম (১২) ও রিপন হোসেন ভুট্টুর মেয়ে রিমা(১১)।

দূর্ঘটনার বর্ণনায় প্রত্যক্ষদর্শী শরীফুল সুলতান জানান, ‘অনেক দূর পর্যন্ত দেখছিলাম, বাচ্চাটি ট্রেনের সামনে আটকে রয়েছে, পড়েনি। আমি বাইকে ছিলাম। ট্রেনটা রাস্তা ক্রস করার পরই আমি বাইক নিয়ে পেছনে ছুটি। কিছু দূর যাওয়ার পর সামনে ব্রিজ পড়ায় আর যেতে পারিনি। বাচ্চাটি ট্রেনের সামনে ঝুলছিল। তার বুকে ট্রেনের সামনের রডে গেঁথে রয়েছে। আর মাথাটা সামনে এবং পাগুলো উল্টো দিকে (ট্রেনের নিচের দিকে) ঝুলে ছিল।’

তিনি ব্যক্তিগত কাজে বুধবার (৯ মার্চ) বরুড়া থেকে কুমিল্লায় এসেছেন। বাড়ি ফেরার পথে ট্রেন আসায় রেল ক্রসিংয়ের ব্যারিকেড পড়ে যায়। তাই তাকে থামতে হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার এখনও শরীর কাঁপছে। কী দেখলাম! চোখের সামনে দেখেছি, তিনটা বাচ্চাকে ট্রেন পিষে দিচ্ছে। কিন্তু কিছু করার ছিল না। সেখানে থাকা বাসের যাত্রীরাও চিৎকার করছিলেন। অনেকে আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমাদের কী করার ছিল? শুধু চেয়ে চেয়ে নিজের মেয়ের বয়সী তিনটা মেয়ে শেষ হয়ে যেতে দেখলাম।’

এ প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘পরে খবর নিয়ে জানতে পারলাম, ট্রেনে যাকে মুখে করে নিয়ে গেছে। তার লাশ প্রায় এক কিলোমিটার দূরে লাকসাম হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনের রেললাইনে পাওয়া গেছে।’

সদর দক্ষিণ থানার ওসি দেবাশীষ চৌধুরী জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস টেনে কাটা পড়ে তিন শিক্ষার্থী মারা গেছে। তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। এসময় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে।

লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি জসিম খন্দকার জানান, লাশ তিনটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পড়ুন আরো খবর,,,,,

কুমিল্লায় ৩ স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন স্কুলছাত্রীর প্রাণহানির ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া মৃতদের দাফন সম্পন্ন করতে তিন পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বুধবার বিকাল ৩টায় মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দুর্গাপুরে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটিতে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাজমা আশরাফী, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহান সরকার ও জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

এর আগে, দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর রেলক্রসিংয়ে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সবাই বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।

মারা যাওয়া স্কুলছাত্রীরা হলো- সদর দক্ষিণের বারপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর এলাকার ওমান প্রবাসী দুলু মিয়ার মেয়ে তাসপিয়া (১২), মাসুম মিয়ার মেয়ে মিম (১২) ও রিপন হোসেন ভুট্টুর মেয়ে রিমা(১১)।