কুয়াকাটায় ১০ দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিলেন বিএনপি সভাপতির ২ ছেলে

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন সব শ্রেনীর ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে কুয়াকাটায় জমির মালিকানা দাবিতে ১০ টি দোকানে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে পৌর বিএনপির সভাপতির দুই ছেলে সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে সৈকত সংলগ্ন শুটকি মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে ওই ১০ দোকানী চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। চলমান ক্রেতার ভিড়ে দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা খুলতে ভুক্তভোগীরা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। তবে এ ঘটনায় পৌর বিএনপির অনেক নেতারাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬ বছর আগে বেল্লাল মোল্লা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তারা দোকানগুলো ভাড়া নেন দোকানিরা।
এসময় ব্যবসায়ীরা দোকনপ্রতি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা করে বেল্লাল মোল্লাকে অগ্রিম অর্থ প্রদান করেন। কিন্তু ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ওই জমি তিন ব্যক্তি মালিকানা দাবি করেন। এর মধ্যে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসুল্লী, রাশেদুল-আফতাব ও বেল্লাল মোল্লা। ফলে ভুক্তভোগীরা এ তিন ব্যক্তিকে বসে বিষয়টি সমাধানের জন্য বার বার অনুরোধ জানান।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও বিষয়টি সমাধান না করে পৌর বিএনপির সভাপতির ছেলে লতাচাপলী ইউনিয়ন য্বুদলের সহ সাধারন সম্পাদক রিয়াজ মুসুল্লী তাদের সঙ্গে দোকানীদের নতুন করে ভাড়ার চুক্তিপত্র করার তাগিদ দেন। আর জমির মালিকানার বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় দোকানীরা রিয়াজ মুসুল্লির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে রাজি হননি।
পরে বৃহস্পতিবার সকালে রিয়াজ মুসুল্লী ও তার ভাই মহিপুর থানা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক সালাউদ্দিন ম্সুুল্লী সহ তাদের অনুসারীরা দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পরেন ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকানী বলেন, আমরা সবাই বেল্লাল মোল্লার সঙ্গে চুক্তিপত্র করেছি। তাকে আমাদের লাখ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া রয়েছে। আমরা রাজনীতি বুঝিনা। আমাদের সামান্য শুটকি বিক্রি করে পেট চলে।
কিন্তু গতকাল এই ঈদ বাজরের মধ্যে রিয়াজ মুসুল্লী ও তার ভাইসহ ৮ থেকে ১০ জন আমাদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সে আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তার সঙ্গে আমাদের ডিট করতে বলেছে। দুইদিন পর ঈদ। রোজার একমাস কোন বিক্রি ছিলোনা, লোকসানে দিন কেটেছে। ঈদে দোকান খুলতে না পারলে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠে যাবে।
বেল্লাল মোল্লা বলেন, ১৯৯৬ সালে পটুয়াখালীর কমিশনার মিলন মিয়ার স্ত্রী উম্মে সালমার কাছ থেকে আমি এই জমি ক্রয় করেছি। সে আমাকে সাড়ে ১৬ শতাংশ জমির দলিল দিয়েছে। পরে সেখানে দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছি। দোকান তোলার সময় বা পরে ভাড়া দেয়ার সময় অন্য কেউ এ জমির মালিকানা দাবি করেনি। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার হঠাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা দোকানগুলো দখলে নিয়েছে। এর আগে মুসুল্লী বাড়ির ছেলেরা আমাকে মারধর করেছে। আমি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।
জমির মালিকানা দাবি করা রাসেদুল ও আফতাব বলেন, সাবেক লতাচাপলী মৌজার ১১২৭ নং ক্ষতিয়ানে ৫১৭৮/১০০২ এবং ৫১৮০/১০০৩ দাগের মালিক ৭ জন। আরজআলী, ওয়াজেদ আলী, আবদুল আলী, সোমেদ আলী, সেকান্দার আলী, সুলতান শেখ ও চান মিয়া। এসব মালিকের কাছ থেকে ৫ একর ৯৯ শতাংশ জমি লাল মিয়া ১৯৭০ সালে ক্রয় করেন।
লাল মিয়ার ওয়ারিশগন ৭ মাস আগে আমাতের আমোক্তারনামা দেয়। আমাদের জমি বুঝে পাওয়ার জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। বর্তমানে আমাদের জমি বুঝে পাওয়ার জন্য দেওয়ানি মামলা চলমান রয়েছে। কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসুল্লী ফোন রিসিভ না করলেও তার ছোট ছেলে লতাচাপলী ইউনিয়ন যুবদলের সহ সাধারন সম্পাদক রিয়াজ মুসুল্লী বলেন, এ যায়গা আমার বাবার।
আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। পরে দোকানীদের আমাদের কাছ থেকে ডিট নিতে বলেছি। কিন্তু কোন সমাধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন