কুর্দিস্তানের স্বাধীনতায় ইসরায়েলের সমর্থন যে কারণে
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইরাকের উত্তরাঞ্চলের রাজ্য কুর্দিস্তানে স্বাধীনতার পক্ষে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। বাগদাদের বিরোধিতা, পার্শ্ববর্তী তুরস্ক ও ইরানের হুশিয়ারি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আপত্তি সত্ত্বেও কুর্দিরা এককভাবে এ গণভোটের আয়োজন করে। এতে প্রায় ৯২ ভাগ কুর্দি স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়।
কুর্দিদের এই গণভোটের বা স্বাধীনতার দাবির পক্ষে রয়েছে একমাত্র ইসরায়েল। আর ইসরায়েলের ইতিহাসে কোনো দেশ বা জাতির স্বাধীনতার দাবির পক্ষে সমর্থন দেয়া এটিই প্রথম।
কিন্তু কুর্দিদের নিয়ে ইসরায়েলের কেন এত আগ্রহ? এ নিয়ে আল জাজিরা একটি গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েল আসলে কুর্দিদের দাবিকে যতটা না গুরুত্ব দিচ্ছে তার চেয়ে ভৌগোলিক রাজনীতিই দেশটির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েল নিজে একটি জাতিগত বিদ্বেষী রাষ্ট্র যা সামরিক শক্তির ওপর টিকে আছে। তাদের নিকটবর্তী বিশ্বস্ত বন্ধু দরকার। এজন্য তারা কুর্দিদের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করছে।
যদিও ইসরায়েল কখনোই ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতাকে মানতে রাজি হয়নি। দেশটি কর্তৃক বিভিন্ন দেশের সামরিক জান্তাদের সমর্থনের দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। কিন্তু শুধুমাত্র কুর্দিদের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের চরিত্র ভিন্ন।
কুর্দিস্তান নিয়ে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য হচ্ছে তার দেশে তেল সরবরাহ নিরাপদ রাখা। ইসরায়েল তার প্রয়োজনীয় তেলের ৭৭ শতাংশ পায় কুর্দিস্তান থেকে। যেটি দেশটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মুহূর্তে আরব বিশ্বের অন্য কোনো দেশ থেকে তেল নেয়ার সুযোগ ইসরায়েলের নেই।
এছাড়া ইসরায়েলপন্থি একটি গোষ্ঠী বা দেশকে দাঁড় করানো ইসরায়েলের আরেকটি উদ্দেশ্য। যেটি হবে আরব বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন।
কুর্দিস্তান স্বাধীন হলে ইসরায়েলের সেনারা কুর্দিস্তানের অবস্থান নিতে পারবে বলেও ইসরায়েল বিশ্বাস করে। বর্তমানে আরব বিশ্বের কোনো দেশে ইসরায়েলের সেনাদের পা রাখার সুযোগ নেই। কুর্দিস্তানে ইসরাইলি সেনারা প্রবেশ করতে পারলে স্থল পথে ইরাক, ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়াকে মোকাবেলা করার পথ তৈরি হবে তাদের।
ইসরায়েল কর্তৃক কুর্দিদের সমর্থন দেয়াকে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ১৯৮২ সালে ওডেড ইননের দেয়া পরিকল্পনারই একটি অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওডেড ইননের ওই পরিকল্পনাকে ‘ইনন পরিকল্পনা’ বলে অভিহিত করা হয়। যেখানে ওডেড ইসরাইলের শক্তি ও আধিপত্য বৃদ্ধির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির পরামর্শ দেয়া হয়।
ইসরায়েল মনে করে, কুর্দিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে ভবিষ্যতে আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশকে এড়িয়ে একটি বিশেষ জোট গঠন করতে পারবে দেশটি। কুর্দিস্তানের নাগরিকদের সঙ্গে এর আগে ইসরায়েল দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সে কারণে কুর্দিরা ইসরায়েলের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করবে না বলে মনে করে দেশটি। এছাড়া দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট ডেভিট বেন গুরিয়ানও ইসরায়েলকে অনারব মুসলিম যারা ইসরায়েলের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন মুসলিম দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির পরিকল্পনা দিয়েছিলেন।
ইসরায়েল ওইসব পরিকল্পনা অনুযায়ী ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যার অন্যতম হচ্ছে ইসরায়েলপন্থি একটি (কুর্দিস্তান) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কুর্দিস্তানের গণভোটের ফল প্রকাশের পর সেখানে যে উল্লাস দেখা গিয়েছিল তার মধ্যে ইসরায়েলের পতাকা ওড়ানো হয় এবং ‘কুর্দিস্তান হচ্ছে দ্বিতীয় ইসরায়েল’ বলে স্লোগান দেয়া হয়।
তবে ইসরায়েলের এসব চেষ্টা সত্ত্বেও কুর্দিদের স্বাধীনতার দাবি কতটা সফল হবে- তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ ইরাক, ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়া প্রকাশ্যেই কুর্দিদের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে কুর্দিদের সীমানা চতুর্দিক দিয়েই আটকানো থাকছে। ওইসব দেশ তাদের উপর দিয়ে ইসরায়েলকে কুর্দিস্তানে যেতে না দিলে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বিফলে যাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন