কুষ্টিয়ায় কন্যা জন্ম দেয়ায় স্ত্রীকে তালাক, নবজাতককে বিক্রি
কুষ্টিয়ায় পর পর তিনটি কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে জেসমিনা নামে এক গৃহবধূকে তালাক দিয়েছে তার স্বামী রবিউল ইসলাম।
শুধু তাই নয়, মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে মাত্র সাত দিনের কন্যাশিশুকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে শিশুটির বাবা রবিউল।
ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি পাইকপাড়া এলাকায়।
গত ৯ নভেম্বর কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাত দিন পর ১৬ নভেম্বর শুক্রবার স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বরদের সহায়তায় সালিশি বৈঠকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে বিবাহবিচ্ছেদ এবং একই বৈঠকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয় ওই শিশুকে।
যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত পরিবার। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের জেসমিনা খাতুনের বিয়ে হয় একই এলাকার রবিউল ইসলামের সঙ্গে। ১৫ বছরের সংসার জীবনে তাদের কোলে জন্ম নেয় ৩ কন্যাসন্তান।
সবশেষ কন্যাসন্তান ভুমিষ্ঠ হয় গত ৯ নভেম্বর। দাম্পত্য জীবনে সুখ ছিল না জেসমিনার পরিবারে। তাই মাঝেমধ্যেই তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকত।
তাদের সংসারে দুটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়ার পর এরই মধ্যে চলতি বছরের প্রথম দিকে জেসমিনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। আর এই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেননি স্বামী রবিউল।
গর্ভের সন্তানটি অবৈধ দাবি করে জেসমিনাকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন রবিউল। এরই মধ্যে আরেকটি কন্যাসন্তান ভুমিষ্ঠ হয়। ভুমিষ্ঠ হওয়ার সাত দিন পর ১৬ নভেম্বর স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বরদের সহায়তায় সালিশি বৈঠক বসে তাদের বিচ্ছেদের বিষয়ে।
২ লাখ টাকার বিনিময়ে আলাদা করে দেয়া হয় তাদের। একই বৈঠকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয় নবজাতকটিকে।
ওই বৈঠকে স্থানীয় মাতব্বররা দরকষাকষি করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ওই শিশুকে একই এলাকার ঈদগাহ পাড়ার আয়ুর আলীর কাছে বিক্রি করে দেয়।
জেসমিনার পরিবারের অভিযোগ, একপ্রকার জোর করেই তাদের সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন রবিউল।
জেসমিনা অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই তার ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করে আসছিল রবিউল। শেষ পর্যন্ত মিথ্যে অপবাদও দেয়া হয় তাকে। জোর করে স্থানীয়দের সহায়তায় আমাকে তালাক দিয়েছে রবিউল। আমার কোল থেকে সাত দিনের মেয়েকে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে ।
জেসমিনের বাবা রেজাউল হক বলেন, বিয়ের পর আমার মেয়ে দুটি কন্যাসন্তান জন্ম দেয়। কিছুদিন আগে আরও একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। এ জন্য আমার মেয়েকে তালাক দেয় রবিউল।
তিনি আরও বলেন, তিন দিন আগে স্থানীয় মেম্বার শরিফুল মণ্ডল, শহিদুল ইসলাম, খলিসাকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান আসলাম টাকার বিনিময়ে আমার নাতনিকে বিক্রি করে দেয়। বাচ্চা দিতে রাজি না হওয়ায় ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার মেয়ের কোল থেকে জোর করে কেড়ে নিয়ে গেছে। পরে শুনেছি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর আমি বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানাই।
এদিকে একাধিকবার রবিউলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মা জানিয়েছেন সন্তান বিক্রির বিষয়টি সঠিক নয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বিচারে আমি ছিলাম না।
খলিসাকুন্ডি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে কারা বিচার করেছে বা কী হয়েছে সেটা জানি না।
দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন