কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে বদলেছে জীবনমান
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র, ধরলা, তিস্তাসহ রয়েছে ১৬টি নদ-নদী। এই নদীগুলোর বুক জুড়ে রয়েছে প্রায় ৪২০টি চর। প্রতি বছর বন্যা ও নদী ভাঙনের ফলে নি:স্ব হয় এসব চরের অনেক পরিবার। এই পরিবারগুলোর মধ্য থেকে জেলার চিলমারী, রৌমারী ও সদর উপজেলায় ২৪টি চরের ৭২০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাক-সবজীর বীজ দেয়া ছাড়াও এই অঞ্চলের জন্য উপযোগী পশু ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পাশে দাঁড়াচ্ছে বিভিন্ন দুর্যোগে।
পরিবারগুলোর বন্ধন অটুট রাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে।
কুড়িগ্রামে প্রতিবছর বন্যা ও নদী ভাঙনের ফলে অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়। বিনষ্ট হয় তাদের আরাধ্য ফসল। ফলে অবস্থাপন্ন পরিবারগুলোও পরে যায় চরম সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে বন্যা ও নদী ভাঙনের শিকার ৭২০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরারি উন্নয়ন সংগঠন ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশ। তারা দুর্যোগকালিন সময়ে ক্ষতিগ্রস্হত পরিবারগুলোকে সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে জড়িত করায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে পরিবারগুলো। পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।
সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলা নদী বিধৌত সর্দারপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এখানে ২৪০টি বন্যা কবলিত পরিবার পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমূণক কর্মকান্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হচ্ছে।
এখানকার বাসিন্দা মালেক ও দিলদার জানান, আমাদের গ্রামে প্রবেশ করার রাস্তাটি বন্যায় ভেঙ্গে গিয়েছিল। চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত রাস্তাটি আমরা নিজস্ব উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদ ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সহযোগিতা নিয়ে মেরামত করেছি। এখন এই রাস্তা দিয়ে অটো প্রবেশ করতে পারছে। আমাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে পারছে। আমরা হাট-বাজারে যেতে পারছি।
এই গ্রামের সুমী বেগম জানান, আমাদেরকে সুশাসন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমরা পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সংবিধান, সংসদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোন আইনি পরামর্শ প্রয়োজন হলে আমরা ফ্রেন্ডশীপে লিগ্যার বুথে গিয়ে তাদের অভিযোগ বাক্সে আবেদন করি। তারা পরবর্তীতে আমাদেরকে বিনামূল্যে আইনী পরামর্শ প্রদান করে।
একই গ্রামের আহাদ আলী, রোসনা ও সাজিনা খাতুন বলেন, আগে হাট থেকে সার কিনে আনতাম, এখন আমরা জৈব সার তৈরী করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি, সরকারী সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করছি।
এই গ্রামের ববিতা বেগম জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্প থেকে আমাকে ৩৬শ’ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দেয়া হয়েছে। ভেড়াটি ৩টি সন্তান দিয়েছে। যে কোন বিপদে ভেড়া বিক্রি করে আমি সমাধান করতে পারবো।
ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশ’র এএসডি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভেড়া পালনসহ পারিবারিক সহিংসতা ও প্রতিকার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পেয়ে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি পাল্টে যাচ্ছে চরের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, সদর উপজেলায় ২৪০টি পরিবারকে ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিভাবে প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত। এর মাধ্যমে চরাঞ্চলের মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন