কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে মাদকে সয়লাব : ধ্বংসের মুখে যুবসমাজ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বানের পানির মতো ভারত থেকে আসছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে গোটা উপজেলা। পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যাবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও মাদক ব্যাবসা থেমে নেই।এতে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলাটি ভারত সীমান্ত বেষ্টিত হওয়ায় এ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। ফলে সংক্রামক ব্যাধির মতো মাদকের নেশা ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার সর্বত্রই। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাদক কেনা বেচা হয়। মাদক ব্যবসা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, জায়গায় বসে অর্ডার করলেই বাড়িতে চলে আসে মাদক। মাদকের এমন ভয়াবহ বিস্তারে ভূরুঙ্গামারী যেন এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য। স্কুল-কলেজের ছাত্র, যুবক, ব্যবসায়ীরাও এ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। নেশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে তারা। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবক সহ সচেতন মহল।
অভিযোগ রয়েছে, মাদকের ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেকেই ও স্হানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত। আর এইজন্যই এলাকার সাধারন মানুষ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত স্পটে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে এই ব্যাবসা। সন্ধ্যার পর এসব স্পটে বসে মাদকের ভাসমান হাট। জয়মনিরহাটের শিংঝাড় লালব্রীজের পাড় ও পুরাতন রেললাইনের দুপাড়,সদর ইউনিয়নের সোনাতলী, মানিককাজি ঘাটের এপার-ওপার, লাকি সিনেমাহল পাড়া, গার্লস্কুল পূর্বমোড়, পাথরডুবী ইউনিয়নের বাঁশজানি, দিয়াডাঙ্গা, শিলখুড়ি , চর-ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের নতুনহাট বাজার ও বাবুর হাট বাজারের পাশের কয়েকটি বাড়ি, তিলাই ইউনিয়নের দুধকুমোর নদের চরে খোচাবাড়ি এলাকায় একটি জায়গায়, পাইকেড়ছড়া ইউনিয়নের পাটেশ্বরী ও ফুটানীবাজারের আশে পাশের এলাকা, দক্ষিন তিলাই, ঢাকাইয়া পাড়ার কয়েকটি বাড়ি ও সোনাহাটসহ উপজেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকাতেই মাদকের ব্যাবসা চলছে।
জানা যায়,ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাদক পাচার করে বাংলাদেশের আনার ক্ষেত্রে দুদেশের প্রায় শতাধিক চোরাকারবারী সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। মাদক চোরা কারবারিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে সর্বনাশা এই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
মাদক ব্যবসায়ীরা ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কয়েকটি রুটে ভাগ করে নিরাপদে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো হলো শিংঝাড় থেকে মানিককাজি হয়ে বাগভান্ডার ও ছোট খাটামারি পর্যন্ত ফেনসিডিল আনার হাইওয়ে হিসেবে ব্যবহ্নত। মানিক কাজি, পাথরডুবি ও বাশঁজানি হয়ে দিয়াডাঙ্গা পর্যন্ত রুটটি গাঁজার রুট হিসেবে ব্যবহ্নত। শালঝোড়, ধলডাঙ্গা, পাগলারহাট ও উত্তর তিলাই দিয়ে আসে মদ। এছাড়াও ছোট ছোট চালানে প্রায় সব রুট দিয়ে মদ আসে।
কাজিয়ারচর, তিলাইয়ের উত্তরাঞ্চল, চর- ভূরুঙ্গামারী হয়ে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে আসে হিরোইন ও ইয়াবার চালান।এসব মাদক সীমান্ত পেরিয়ে সড়ক পথে শহরে আসে। পরে বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, ভ্যান-লরিতে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় এসব মাদকের চালান।
পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে গাঁজা, হেরোইন, মদ ও ইয়াবাসহ মাদককারবারিকে আটক করলেও চিহ্নিত বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীরা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ পাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যাক্তি বলেন আমাদের বাড়ির পাশেই দিনে রাতে মাদক কেনা বেচা ও মাদক সেবনের ধুম পড়ে যায়। মাদকের গন্ধে বাড়িতে থাকাই দায় হয়ে যায়। কিন্তুু মাদকসেবীদের ভয়ে নীরব হয়ে আছি। নাম প্রকাশের ভয়ে পুলিশকেও জানাতে পারছিনা।
কথা হয় সদর ইউনিয়নের কামাত আঙ্গারিয়া গ্রামের পিয়ারি বেগমের সাথে তিনি বলেন আমার ছেলে মাদকে আসক্ত হয়ে পরেছে।অনেক চেষ্টা করেও তাকে মরন নেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারছিন।এখন কি করব ভেবে পাচ্ছিনা।
ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের সূত্র মতে, গত জুলাই মাসে ৯০ পিচ ইয়াবা ২ গ্রাম হিরোইন ও ১ কেজি ৬শ গ্রাম মাদকসহ তিনজনকে আটক ও এ বিষয়ে ৪ টি মামলা করা হয়েছে।তারমধ্যে দুটি বিজিবি কর্তৃক ও দুটি পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করে।
কুড়িগ্রাম মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে তথ্য অনুযায়ী,গত জুলাই/২১ থেক জুন/২২ পর্যন্ত তারা ১১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে। মাদকবিরোধী অভিযানে ৫৫ বোতল বিলেতী মদ, ৬ কেজি ১৫০ গ্রাম গাঁজা, ১৪ বোতল ফেন্সিডিল, ২ গ্রাম হিরোইন, ২ পিচ ইয়াবা উদ্ধার ও নগদ ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮২০ টাকা জব্দ করেছে।
এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন,মাদকের বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত আছে। এবিষয়ে কোন আপোষ করবনা।মাদক ব্যাবসায় যারাই জড়িত থাকুক কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। মাদক নির্মূলে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কুড়িগ্রামের সহকারী পরিচালক আবু জাফর বলেন, মাদক নিমূলে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জনপ্রতিনিধি,গনমাধ্যম কর্মী ও স্হানীয় সুধীমহল নিয়ে কর্মশালা করছি। জেলার মধ্যে একটি মাত্র অফিস সেখানে আমাদের জনবল সামান্য। তবে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করে আমাদের সীমিত সামথের্র মধ্যেও অভিযান থেমে নেই। মাদকের সাথে যতবড় নেতাই জড়িত থাকুক তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন