ভিক্ষে নয়, কর্মের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে কুড়িগ্রামের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা
ভিক্ষে নয় কর্মের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন চায় কুড়িগ্রামের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। করোনাকালিন সময়ে অসহায় জীবন যাপন করা এসব মানুষ চায় সামাজিক মর্যাদা ও কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিক জীবন। এই পরিস্থিতিতে তাদেরকে কর্মমূখী পরিবেশে সম্পৃক্ত করতে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ।
স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন এএফএডি (এসোসিয়েশন ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট) তাদেরকে ব্যবসায় যুক্ত করতে উপকরণসহ দোকানঘর তৈরী করে দিয়েছে। আর পণ্য বিক্রির মাধ্যমে শুরু হয়েছে তাদের নতুন কর্মক্ষেত্র।
শনিবার তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিলুফা সুলতানা, ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারি কমিশনার গোলাম ফেরদৌস, সদর ইউএনও রাসেদুল হাসান, এএফএডি’র প্রধান নির্বাহী সাঈদা ইয়াসমিন রুপা, তৃতীয় লিঙ্গ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মো. আবু আজাদ রানা প্রমুখ।
কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী রয়েছে। এদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫জন বসবাস করে শহরের ধরলা ব্রীজ সংলগ্ন উত্তর মরাকাটা ওয়াপদা বাঁধে। করোনাকালে তাদের উপার্জন থমকে গেছে। প্রকাশ্যে চেয়েচিন্তে অর্থ চাইতে গেলেই লোকজন ভয়ে সটকে পরে। এমন পরিস্থিতিতে এই জনগোষ্ঠীকে আয়মূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে তাদের সাথে আলোচনা করে কাপড়ের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও দোকানঘর নির্মান করে দেয় স্থানীয় বেসরকারী সংগঠন এসোসিয়েশন ফর অল্টারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট (এএফএডি) নামের একটি সংগঠন। তারা দেশী বিদেশী বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ডোনেশন নিয়ে তহবিল সংগ্রহ করে দাঁড়ায় তাদের পাশে।
দোকানঘর ও উপকরণ পেয়ে খুশি তৃতীয় লিঙ্গ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মো. আবু আজাদ রানা জানান, আমরা ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি। আমরা মানুষের কাছে ভিক্ষে নয় সম্মানজনক কাজ চাই। কাজের মাধ্যমে সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। এছাড়াও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নদেরকে নিয়ে আমরা কোনভাবে আশ্রয় নিয়ে আছি। আমাদের জন্য বাসস্থান করে দিলে খুবই ভাল হয়।
স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন এএফএডি’র প্রধান নির্বাহী সাঈদা ইয়াসমিন রুপা জানান, জার্মানভিত্তিক মাল্টিজার ইন্টারন্যাশনাল এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও রিজিওনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মারেন পিচ কুড়িগ্রামে কাজ করতে এসে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলে তাদের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারই আগ্রহে আমার সংগঠনের সহকর্মী ও দেশীয় এনজিও’র বন্ধুদের টোকেন ডোনেশন দিয়ে এই তহবিল সংগ্রহ করে দোকানঘর ও উপকরণ কিনে দেয়া হয়। যাতে তারা মানুষের দাঁড়স্থ হতে না হয় এজন্য একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে সামাজিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে। তাদেরর জীবন-জীবিকা পরিবর্তন করে তারা যেন কর্মক্ষম হতে পারে এজন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করতে এসে বলেন, বেসরকারি সংগঠন এএফএডি তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এরা যদি ব্যবসা ভালভাবে পরিচালিত করতে পারে তাহলে তাদের স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থাসহ কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন