উপ-সহকারি প্রকৌশলী সেজে করছেন দূর্নীতি!
কুড়িগ্রামে বিএমডিএ অফিসের সহকারি মেকানিক নাহিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
সহকারি মেকানিক পদ হলেও উপ-সহকারি প্রকৌশলীর সীল-স্বাক্ষর ব্যবহার করেন। নীতিমালায় সহকারি মেকানিককে উপ-সহকারি প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেয়ার সুযোগ না থাকলেও স্বার্থসিদ্ধি করতে তাকে ওই পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদিকে এ সুযোগে সোলার পাম্প, সেচ লাইসেন্স, চাকুরি দেয়াসহ নানা অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। সেচ চালকদের প্রশিক্ষণ ফি আত্মসাৎ করারও অভিযোগ উঠেছে নাহিদের বিরুদ্ধে।
নাহিদ আলী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) অফিসের সহকারি মেকানিক পদে নাগেশ্বরী উপজেলা কার্যালয়ে যোগদান করেন এ বছরের ৬ মার্চ। যোগদান করে হয়ে যান উপ-সহকারি প্রকৌশলী। এদিকে মেকানিক সংকটে পড়েছেন সেচ চালকরা। সেচ চালকদের সাথে অশোভন আচরণের বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে উপ-সহকারি প্রকৌশলীর দায়িত্ব নেয়া নাহিদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম নামে এক কৃষকের সেচের লাইসেন্স পুন:বহালের জন্য উপজেলা নির্বাহী বরাবর করা আবেদনে দেখা যায় উপ-সহকারি প্রকৌশলী ভারপ্রাপ্ত সীল সংযুক্ত করে স্বাক্ষর করেছেন নাহিদ আলী। যদিও সহকারি মেকানিক থেকে উপ-সহকারি প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেয়ার সুযোগ নেই।
অভিযোগ উঠেছে, দূর্নীতিতে ভরপুর বিএমডিএ’র নাগেশ্বরী উপজেলা কার্যালয়। অফিসের দূর্ণীতির চালক সহকারি মেকানিক নাহিদ আলী। উপজেলা প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন কুড়িগ্রাম সদরের দায়িত্বে। এখানে চলতি দায়িত্ব হওয়ায় অফিস করেন না। তার পক্ষ হয়ে সকল কাজ করেন নাহিদ আলী। এ কারণে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় ভারপ্রাপ্ত উপ-সহকারি প্রকৌশীর।
নাহিদ আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ অনেক। উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের এক বাসিন্দার কাছ থেকে সেচে লাইসেন্স দিতে চেয়ে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে দু’মাস থেকে ঘুরাচ্ছেন নাহিদ আলী। আরও ১৫ হাজার টাকা দাবী করছেন। তবে ওই ব্যক্তি নাম প্রকাশ করতে রাজী হননি। বলেন, নিউজে বক্তব্য দিলে লাইসেন্সটা পাবোনা। টাকাও দেবেনা। তার স্বজনের ভিডিও বক্তব্য রয়েছে প্রতিবেদকের হাতে। একই ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সোলার পাম্প দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
নাগেশ্বরী পৌরসভার আশারমোড় এলাকার জামাল হোসেনের শ্বশুর কালিগঞ্জের সেকেন্দার আলীকে লো লিফট সোলার পাম্প (এলএলপি) দেয়ার কথা বলে পাঁচ হাজার টাকা নেন নাহিদ আলী। পরে আরও পাঁচ হাজার টাকা চাইলে জামাল হোসেন নাহিদ আলীর দেখা করলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, আপনার শ্বশুরের কাজ হবেনা। টাকা ফেরত নিতে বলেন। চাকুরি দেয়ার কথা বলেও দুই যুবকের কাছে টাকা নিয়ে দুই মাস থেকে ঘুরাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও সেচপাম্প চালকদের সরকারি প্রশিক্ষণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে নাহিদ আলীর বিরুদ্ধে। উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়নের কুটি বামনডাঙা এলাকার সোলার পাম্পচালক আলাউদ্দিন বলেন, রংপুরে ট্রেনিং করলে আগে সাতশ’ টাকা দিতো। এবারও সাড়ে সাতশ’ টাকা দেয়ার কথা শুনছি। আমরা তিনশ’ করে টাকা পেয়েছি। আমরা নতুন মানুষ। চালাক হই নাই। ভেতরের খবর জানিনা।
নেওয়াশী ইউনিয়নের সুখাতি এলাকার সেচ চালক ফজলু মিয়া বলেন, আমার সেচের কাছে আবাসিক লাইন দিয়ে সেচ চালানোর কারনে আমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। অভিযোগ করেছি দেড় মাস হলো। কোন খবর নাই। আস্করনগর এলাকার সেচ চালক আব্দুল কাদের জানান, আমার লাইন তুলে দিয়ে যাওয়ার পরে ফেস পড়ে যায়। লাইন তোলার কথা বললে নাহিদ স্যার জানায় ওরা পাঁচশো টাকা চায়। আপনি বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেন।
এ বিষয়ে সহকারি মেকানিক নাহিদ আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সীল স্বাক্ষর ব্যবহারের অনুমতি আমাকে হেড অফিস দিয়েছে। সিল স্বাক্ষরের অনুমতি হেড অফিস দিয়েছে? হেড অফিসের লিখিত কিংবা কোন কর্মকর্তা দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এতো কিছু কি আর মোবাইলে বলা যায়? আপনি আমার সাক্ষাত করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, তার যোগ্যতা না থাকলেও অফিসে লোকবল না থাকায় তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।
বিএমডিএ এর কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খান বলেন, অথরিটি মনে করেছে সে পারবে। তাই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বললে ফোন কল কেটে দেন তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন