কেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন নির্মলা?
ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিপরিষদে ঢুকেছেন ধর্মেন্দ্র প্রধান, পীযূষ গোয়েল, নির্মলা সীতারমণ ও মুখতার আব্বাস নকভী। চারজনের সবারই পদোন্নতি হয়েছে। তবে এর মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব পাওয়া নির্মলা সীতারমণের সাফল্যের পাল্লাই ভারী বলে মনে করছেন অনেকে।
এর আগে দুবার ইন্দিরা গান্ধী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এ দপ্তরের ভার নিয়েছিলেন। এই প্রথম কোনো নারীকে পূর্ণ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হলো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ চারজনকে পুরস্কৃত করেছেন তাদের অসামান্য কাজের স্বীকৃতস্বরূপ।
নির্মলা সীতারমণ
সীতারমণের ব্যাপারে বলা হচ্ছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের (প্রতিমন্ত্রী হিসেবে) কাজের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদি ও অমিত শাহের মন জয় করেন। বহুপক্ষীয় সমঝোতার ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও কৌশলের সঙ্গে বাণিজ্য সমঝোতার বিষয়গুলোর সামলেছেন। সম্প্রতি ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চায়না, সাউথ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত জোট) বৈঠকের জন্য তিনি চীন সফর করেন এবং ডোকলাম সীমান্তে উত্তেজনা নিয়ে আলোচনাও করেন। এ ছাড়া বিজেপির মুখপাত্র হিসেবেও তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে আক্রমণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব ভূমিকা রাখেন।
ধর্মেন্দ্র প্রধান
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের পাহাল ও উজ্বালা স্কিম দুটির সাফল্যের কারণে প্রধানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। দরিদ্র মানুষের জীবন, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, পরিবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এ দুটি স্কিম।
দ্য ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার অব এলপিজি অথবা প্রত্যক্ষ হস্তান্তরিত লাভ (পাহাল) সাফল্যের মুখ দেখেছে। বিশ্বে অর্থ লেনদেনের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হওয়ার কারণে গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডসে নাম উঠে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর পাহাল কর্মসূচি চালু করে। এলপিজি ভোক্তাদের মধ্যে যাঁরা পাহাল স্কিমে যোগ দেন, তাঁদের কাছে বাজারমূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করা হয়। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এলপিজি ভর্তুকিও চলে যায়। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০১৫ সালের ৩০ পর্যন্ত ১২ কোটি ৫৭ লাখ পরিবার গৃহস্থালিকাজে অর্থ উত্তোলন করে।
একইভাবে উজ্বালা স্কিমও দরিদ্রদের জন্য চালু করা হয়। গ্রামীণ পরিবারগুলোতে ধোঁয়াহীন স্টোভ দেওয়া হয়। এর ফলে মানুষের, বিশেষ করে নারীদের জীবন বদলে যায়। উজ্বালার স্কিম চালুর কারণে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বিজেপির ঐতিহাসিক জয় হয়। ধর্মেন্দ্র প্রধান ২০১৯ ওড়িশা রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পদে লড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পীযূষ গোয়েল
পীযূষ গোয়েল জ্বালানি ও কয়লা খাতে সংস্কার বাস্তবায়ন করেছেন। গ্রামের বিস্তৃত এলাকায় বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকাই মুখ্য। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পের (আরইসি) অনুযায়ী, চলতি বছর ২০ জুন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬৮৫টি গ্রাম বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি থাকা চার হাজার ১৪১টি গ্রাম ২০১৮ সালে বিদ্যুতের আওতায় আসবে। ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এক হাজার দিনের মধ্যে ১৮ হাজার ৪৫২টি গ্রামকে বিদ্যুতের আওতায় আনার অঙ্গীকার করেন।
মুখতার আব্বাস নাকভী
দল বা সরকার যাই হোক, নকভী সব সময়ই এদের পক্ষে কথা বলেছেন এবং বিরোধী পক্ষের ওপর বারবার আক্রমণাত্মক কথা বলেন। তিনি সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম নেতা। নাজমা হেপতুল্লাহর বিদায়ের পর মোদির মন্ত্রিসভায় কোনো মুসলিম নেতা ছিলেন না। নকভী এ শূন্যতা পূরণ করলেন। সংসদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়াও সংখ্যালঘুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন যোগ্যতার সঙ্গে।
আজ রোববার সকালে নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় নতুন নয় সদস্য শপথ নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ মন্ত্রিসভার নতুন ও পূর্ণ মন্ত্রিত্ব পাওয়া চারজনকে শপথ পাঠ করান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন