কেবল লাইন ডিজিটালাইজেশন ঢাকা ও চট্টগ্রামে
কেবল অপারেটর-ডিস্ট্রিবিউটররা শর্ত না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা: তথ্যমন্ত্রী
দেশে ২৪টির বেশি বিদেশি চ্যানেল ক্লিন ফিড দেয় এগুলো চালাতে কোনো বাধা নেই। এরপরও এগুলো কেউ না চালালে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হবে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, কেবল অপারেটর ও ডিস্ট্রিবিউটরদের লাইসেন্সের শর্ত মেনে চলতে হবে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেবল লাইন ডিজিটালাইজেশন করতে হবে।
বিদেশি চ্যানেলের ক্লিনফিড নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তারা দেশ ও মিডিয়ার শত্রু বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
সচিবালয়ে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ২৪টির বেশি বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ক্লিন ফিড দেয়, এগুলো চালাতে কোনো বাধা নেই। এরপরও এগুলো কেউ না চালালে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হবে।
এ সময় টেলিভিশন মালিকদের পক্ষ থেকে ক্লিন ফিডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আকাশ সবার জন্য উন্মুক্ত। শুধু ইউরোপের দেশ নয়, উপমহাদেশের সব দেশেই ক্লিনফিড চালাতে হয়। সে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে। আইন বাস্তবায়নের জন্য কেবল অপারেটরদের ২ বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। সবার সঙ্গে বৈঠক করেই ১ অক্টোবর থেকে আইনটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন একটি মহল থেকে এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা চলছে। তারা দেশ, মিডিয়া, শিল্পী কলাকৌশলী সবার বিপক্ষে গিয়ে তারা অবস্থান নিচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে ২৪ টির বেশি বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ক্লিন ফিড দেয়। এগুলো চালাতে কোন বাধা নেই অথচ কেবল অপারেটররা সেগুলোও বন্ধ করে রেখেছেন, কেউ এসব চ্যানেল না চালালে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের আকাশ সব চ্যানেলের জন্য উন্মুক্ত কিন্তু সেটা হতে হবে দেশের আইন মেনে। বাংলাদেশে ক্লিন ফিড পাঠানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোর। এজন্য বেশি প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে না। কেবল অপারেটর ও ডিস্ট্রিবিউটরদের লাইসেন্সের শর্ত মেনে চলতে হবে। কেউ আইনভঙ্গ করলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আইপিটিভি বাস্তবতা তবে ব্যাঙের ছাতার মতো অনুমোদন দেওয়ার প্রযোজন নেই। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী কোনো আইপিটিভি কোনো সংবাদ প্রচার করতে পারবে না।
চ্যানেল ডিজিটাইলেজেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে সেপটপ বক্সের টাকা নেওয়া হবে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেবল লাইন ডিজিটালাইজেশন করতে হবে।
এর আগে টেলিভিশন মালিকদের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্যে ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, কেবল অপারেটরদের নির্দেশ ছিল যে সব চ্যানেলের ক্লিন ফিড আছে, সেগুলো চলবে। কিন্তু সব চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে বিদেশের কাছে ভুল মেসেজ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চাপের মুখে নতি স্বীকার না করা উচিত। শিল্পী কলাকৌশলীদেরও ধন্যবাদ জানাই। সমস্ত নেটওয়ার্ককে ডিজিটালাইজেশান করার যে পরিকল্পনা সেটিও যুগোপযোগী। বাংলাদেশের দর্শকরা ক্লিন ছবি পাবেন।
আইপিটিভির নামে যেভাবে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হচ্ছে, এটা মূলধারার কখনো বিকল্প হতে পারে না। অনেক হিসেবে করে টিভির লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। ৭০-১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে টিভি চলছে। আইপিটিভি কখনো মূল টিভির বিকল্প হতে পারে না। কিছুদিন আগে জয়যাত্রা টিভি দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, এটা কি ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। সামনে জাতীয় নির্বাচন আছে, তখন এ ধরনের আইপিটিভিগুলো জটিলতা তৈরি করতে পারে, তাই আইপিটিভির লাইসেন্স দেওয়ার আগে আলোচনা করে নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
ডিস্ট্রিবিউটররা কোন দায়িত্ব নিচ্ছেন না, কেবল অপারেটরদের আমাদের মুখোমুখি দাড় করিয়েছেন, সবাইকে ডেকে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান ইকবাল সোবহান।
অ্যাটকোর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, টিআরপির ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছিল। কোনো অনমুতি ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান টিআরপি করছিল। তারা কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিত। এটি বন্ধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
অন্য কোন আইপিটিভি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য প্লাটফর্মের জন্য টেলিভিশন দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে টেলিভিশনগুলোকে পোর্টালের লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এসময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম প্রমুখ।
বৈঠকে অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ক্লিন ফিডের বিষয়টি আমাদের প্রাণের দাবি। ২০০৬ সালে বাস্তবায়নের জন্য আইন করা হলেও সেটি বাস্তবায়ন করা যায় নি। সবাইকে চিন্তা করতে হবে দেশের জন্য ভালো কোনটি। সারা পৃথিবীতে ক্লিন ফিডের বিষযটি রযেছে। এর ফলে প্রচুর অর্থ দেশ থেকে চলে গেছে। এখন শুধু টেলিভশন মালিকরা লাভবান হবে না, পুরো দেশ লাভবান হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন ভালো মানের প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে, যাতে দর্শক ধরে রাখা যায়। অন্য দেশে অপারেটররা ক্লিন ফিড নিয়ে আসে। আমাদের দেশে কেন নিয়ে আসবে না?
অঞ্জন চৌধুরী বলেন, কেবল অপারেটরদের বড় একটি অংশ এটাকে সমর্থন জানিয়েছে। যারা আন্দোলেনর কথা বলছে, তারা দেশের কথা বিবেচনা করলে এখান থেকে সরে আসবে। তাদের সংশয় দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ডিজিটাইলেজেশানের সিদ্ধান্ত ভালো। ক্লিন ফিডের সিদ্ধান্ত থেকে যাতে কোনভাবে ফিরে না আসা হয়।
তথ্য সচিব মকুবুল আহমদ বলেন, সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেই আইন করেছে এবং আইনের বাস্তবায়ন করেছে। যারা অপারেটর এবং ডিস্ট্রিবিউটর আছেন, সম্প্রচারের সময় তারাও গুরুত্বপূর্ণ। তারা আইনটি বাস্তবায়নের বিপক্ষে নয়। কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আইন বাস্তবায়নে ৬৪ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছি। আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রস্তুত আছে।
আইপিটিভির জন্য একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি হয়েছে। খুব শিগগরিই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান তিনি।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর সরকারের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ক্লিনফিড ছাড়া, অথাৎ বিজ্ঞাপনসহ সম্প্রচার করা যাবে না কোনো বিদেশি চ্যানেল। বিদেশি চ্যানেলগুলো সে বিশেষ ব্যবস্থা না রাখায়-পুরোপুরি সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-কোয়াব। তবে শনিবার বিকেলে পৃথক সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজেদের অবস্থান জানায় কেবল অপারেটরদের দুটি সংগঠন।
বছরে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বিদেশি চ্যানেল, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ২০০৬ সালে কেবল নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের কথা বলা হলেও এত বছর তা কার্যকর করা যায়নি। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে, খসড়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন