কেমন চলছে ইসির জাতীয় নির্বাচন প্রস্তুতি?
জাতীয় নির্বাচনের মতো অত বড় পাবলিক নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন গ্যারান্টি দেয়ার সুযোগ নেই— সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার এ বক্তব্যের পর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। খোদ নির্বাচন কমিশনাররাও তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়েছে। তবে তারাও ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকটা নির্বাচন ঘিরে নিজেদের মতো হিসাব কষছে দলগুলো।
দলগুলোর আপত্তি-অনাপত্তি আমলে না নিলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এই নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য তারা অনেক কাজ করছেন। যেমন: ভোটার তালিকা ও সীমানা পুনঃনির্ধারণ হয়ে গেছে। প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালও প্রস্তুত। চলছে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের কাজ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির হালচাল নিচে দেয়া হলো—
আরপিও সংশোধন: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে এতে ইভিএমের বিষয়টা যুক্ত হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন: এবার নিবন্ধন পেতে ৭৫টি নতুন দল আবেদন করছিল। তবে নিবন্ধন দেয়ার মতো যোগ্য কোনো দল পায়নি ইসি। পরে সংশ্লিষ্ট সব আবেদনকারীকে তা জানিয়েও দেয়া হয়েছে। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি দল অংশ নিতে পারবে।
সীমানা পুনঃনির্ধারণ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ সম্পন্ন করেছে ইসি। এতে ২৫টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র: নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করবে না ইসি। গত বছরের তালিকা দিয়েই হবে একাদশ সংসদ ভোট। তবে এখন আসনভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুতির কাজ চলছে।
ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। এসব ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত দাবি-আপত্তি গ্রহণ করা হবে। সেসব প্রক্রিয়া শেষে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত হবে ৬ সেপ্টেম্বর।
ইসি সূত্র জানা গেছে, নবম সংসদে ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি। ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি।
একইভাবে সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটারের বিপরীতে ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭টি। এ সময় ৩০০ আসনে ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি।
আর এবারের নির্বাচনে ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের বিপরীতে প্রয়োজন হবে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র। এতে ভোটকক্ষ থাকবে কমবেশি ২ লাখ। ৩০০ আসনের মধ্যে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র সমতল এলাকায় ৩৯ হাজার ৩৮৭টি এবং পার্বত্য এলাকায় ৬১৩টি। এছাড়া এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে কমবেশি ৬ লাখ জনবলের প্রয়োজন হবে বলে জানা গেছে।
বাজেট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনে ২৫০ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছিল ইসির। সূত্র জানায়, যেহেতু অর্ধেকেরও বেশি আসনে ভোট হয়নি, তাই গতবার খরচ কম হয়েছে।
এছাড়া ভোটে মনোয়নপত্র, ব্যালটসহ অন্যান্য অফিসিয়াল কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ, হেসিয়ান ব্যাগ, গাম ব্যাগ, ব্যালট বাক্স সংগ্রহ করে রেখেছে ইসি।
কেনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, অফিসিয়াল সিল, ব্রাশ সিল, লাল গালা, অমোচনীয় কালী-কলম, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লকসহ অন্যান্য স্টেশনারি।
অক্টোবরের মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন ইসির কর্মকর্তারা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের ভোটের জন্য ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়। আর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য তফসিল দেয়া হয়েছিল ২ নভেম্বর।
দশম সংসদের অধিবেশন ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হওয়ায় এবার মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এই নির্বাচনের তারিখ রেখে নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল হতে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন