কোটার বেড়াজালে বন্দি ট্রেনের টিকিট, ভোগান্তিতে জনসাধারণ
ট্রেনের টিকিট কাটতে বুধবার রাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। বৃহস্পতিবার সকালে কাউন্টার খুলতে না খুলতেই জানতে পারলেন এসি টিকিটি শেষ। তিনি বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে মাত্র দুজন ছিলেন। এসি টিকিট চাইতেই কাউন্টার মাস্টাররা বলেন, নেই। চারটি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করা হয়। তাই সব বিক্রি হয়ে গেছে। ঘটনা যদি তাই হয় তাহলে চারটা কাউন্টার থেকে ৮ জন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪টি করে ৩২টি টিকিট কিনতে পারবে। কিন্তু ট্রেনে তো এসি টিকিট ৩২টি নয়। বাকি টিকিটগুলো কোথায় গেলো। কাউন্টার খোলা মাত্রই বিক্রি কিভাবে হলো?’প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।
ট্রেনের টিকিট নিয়ে এমন প্রশ্ন শুধু জাহাঙ্গীর আলমের নয়, অনেক যাত্রীর। কিন্তু এসব প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ট্রেনের টিকিটের ৩৫ শতাংশই নির্ধারিত থাকে বিভিন্ন কোটায়। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট যাত্রীদের জন্য কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু এই টিকিটও যাত্রীরা ঠিক মতো পাচ্ছেন না। নানা কায়দায় চলে যাচ্ছে অঘোষিত বিভিন্ন ‘কোটা’সহ কালোবাজারে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয়, রাজনৈতিক, ডাক্তার ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের জন্যও অঘোষিত বিশেষ কোটা রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য কমলাপুর স্টেশন থেকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টিকিটি বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ টিকিটি রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৫ শতাংশ ভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে অনলাইন ও মোবাইলের মাধ্যমে।
মোবাইলে যে ২৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হয় সেক্ষেত্রেও অনিয়ম করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মোবাইল ফোন ও অনলাইনে বারবার চেষ্টা করেও টিকিটি না পাওয়া যায় না। জানা গেছে, পরবর্তীতে রেলের কর্মকর্তারা এসব টিকিট কালোবাজারি ও বেশি দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করেন।
রেলওয়ের তথ্যমতে, এর বাইরেও কিছু কোটা রাখা হয়। যা ৪-৫ শতাংশের বেশি নয় বলে দাবি রেল কর্মকর্তাদের। কিন্তু কাউন্টারের জন্য বরাদ্দ রাখা ৬৫ শতাংশ টিকিট বাস্তবে কাউন্টার থেকে যাত্রীরা কিনতে পারেন না। এমন অভিযোগ কমলাপুরে টিকিট কাটতে আসা অধিকাংশ যাত্রীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলের বেশিরভাগ ভিআইপি টিকিটই থাকে এসি চেয়ার আর কেবিন। তাই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও এসি টিকিট পায় না যাত্রীরা। কাউন্টারগুলো খোলার সঙ্গে সঙ্গেই কাউন্টার মাস্টাররা জানান, এসি টিকিটি শেষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘৩৫ শতাংশ নয়, ৫০ শতাংশের ওপরে কোটায় টিকিট বিক্রি হয়। মন্ত্রণালয়, মন্ত্রী, সচিব, সাংবাদিক, রাজনৈতিকসহ সব ধরনের লোকের তদবির রয়েছে ট্রেনের টিকিটের জন্য। মন্ত্রণালয় থেকে অনেক টিকিট নিয়ে যাওয়া হয়। বাস্তবে কোটা কম দেখানো হলেও আসলে সেটা অনেক বেশি। তাছাড়া কাউন্টার ম্যানেজাররা রাতে কাউন্টার খুলে অনেক টিকিট প্রিন্ট করে বিক্রি করে দেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, ‘বুধবার (১৪ জুন) রাত ১০টার দিকে দুজন মাস্টার কাউন্টার খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং অনেকগুলো টিকিট প্রিন্ট করেন। আমরা প্রিন্টের শব্দ শুনেছি। এরপর দেখি তারা দ্রুত বের হয়ে গেলেন। জিজ্ঞাসা করলে বলেন, তিনি নাকি কম্পিউটার বন্ধ করে যাননি। তাই বন্ধ করতে এসেছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজর শিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘এসব অভিযোগ ঠিক না। এখানে অনিয়ম করার কোনও সুযোগ নেই। একজন চারটি করে টিকিট কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে কেউ যদি তার ২টি টিকিট বিক্রি করে দেন তাহলে আমাদের কী করার থাকে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র ১০ শতাংশ টিকিটি কোটায় বিক্রি করি। বাকিগুলো মোবাইল, অনলাইন ও কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন