কোটা আন্দোলনের নিউজ করায় ৫ বছরের সন্তানসহ গ্রেপ্তার হোন সাংবাদিক আবু হানিফ

২০২৪ সালের ২৩ জুলাই, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে শেরপুর জেলার সাংবাদিক মো. আবু হানিফ ও তার ৫ বছরের ছেলে আয়াতকে গ্রেপ্তার করেছিল শেরপুর সদর থানা পুলিশ। ওই সময় এ ঘটনাটি জেলায় এবং সাংবাদিক সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল।

জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক আবু হানিফ জাতীয় দৈনিক দিনকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি কোটা আন্দোলনের সময় শেরপুরের ১৩, ১৭ ও ২০ জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। যেখানে ছাত্রজনতার আন্দোলনের নানা দিক উঠে এসেছিল।

২০ জুলাইয়ের আন্দোলনে শেরপুরে পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ২১ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে একটি বিস্ফোরক মামলা করেন। যেখানে সাংবাদিক আবু হানিফকে ২ নাম্বার আসামি করা হয়। এ মামলায় ২৩ জুলাই বিকালে শেরপুর শহরের কলেজ মোড় থেকে তার মোটরসাইকেলে থাকা ৫ বছরের ছেলে আয়াতসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে সাংবাদিক আবু হানিফ বলেন, আমি আগে থেকেই তৎকালীন সরকারের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, অপকর্ম ও ভোট ডাকাতি নিয়ে সংবাদ করেছি এবং আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে লেখালেখি করেছি। কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে লেখালেখি করেছি। কিন্তু আমার অজান্তেই ২০ জুলাই ২০২৪ সালে আমার নামে বিস্ফোরক মামলা হয়।

২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকালে আমার ৫ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে মোটরসাইকেল করে শহরে বিরিয়ানি আনতে গিয়েছিলাম। কারফিউ থাকার কারণে কোনো দোকান খোলা ছিলো না। তাই বাসার দিকে আসছিলাম। পথিমধ্যে ৪ মোটরসাইকেল করে ৮ জন পুলিশ এসআই কামরুল ও এসআই ওয়াদুদ এর নেতৃত্বে আমি ও আমার ছেলেকে ঘিরে ফেলে তারা।

পুলিশ আমাকে বলে ‘তোর নামে মামলা আছে, তখন আমি বলি আমার নামে যদি মামলা থাকে ওয়ারেন্ট কাগজ দেখান। তখন উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলে তুই বিএনপি নেতা, তখন আমি বলি আমি একজন সংবাদকর্মী দৈনিক দিনকালে কাজ করি। তখন পুলিশের এসআই ওয়াদুদ আরও উত্তেজিত হয়ে গালি দিয়ে বলে তোকেই তো খুজতেছিলাম আমরা।

তখন মোটরসাইকেলে থাকা আমার শিশুসন্তান ভয়ে আর্তনাদ করতে শুরু করে।’ আমি তাদের অনুরোধ করি আমার সন্তানের সামনে গালি গালাজ করবেন না। পরে আমি আরও অনুরোধ করি আমার ছেলেকে বাসায় রেখে যেখানে যেতে বলবেন সেখানেই যাবো।

কিন্তু এসআই ওয়াদুদ বলে তোর ছেলেকে আমাদের পুলিশের একজন রেখে আসবে বাসায়। কিন্তু আমি এটা মানতে রাজি না থাকায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে পুলিশসহ আমার বাসায় আসে এবং আমার ছেলেকে রেখে আমাকে থানায় নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমাকে থানায় নেয়ার পর পুলিশরা বলে আমার নাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট অনেকদিন থেকেই খারাপ। আমাকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি তো ভয়ে আর্তনাদ শুরু করি। তখন তদন্ত ওসি শফিকুল ইসলাম আমাকে শান্ত থাকতে বলেন এবং বলেন আমি জানি আপনি ভালো মানুষ।

আপনার জন্য যত ধরনের আইনী প্রক্রিয়া আছে আমি প্রয়োগ করে আপনাকে আমি মুক্ত করবো। পরের দিন ২৪ জুলাই আমাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলখানায় ছাত্রজনতার বিক্ষোভের পর জেল থেকে বের হয়।