কোটা আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রধানমন্ত্রীর

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহত ৩৪ জনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা হিসেবে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র ও নগদ অর্থ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৮ জুলাই) সকালে গণভবনে এ সহায়তা দেন তিনি।

সকালে গণভবনে রংপুরে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারসহ ৩৪ জনের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় নিহত পরিবারের সদস্যরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় নিহতদের স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের খোঁজ-খবর নেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীও আবেগ সংবরণ করতে ব্যর্থ হন। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রীর অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রী তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাকে দেখেন, আমি কত শোক নিয়ে বেঁচে আছি।”

“আমি আপনাদের ব্যথা বুঝতে পারছি। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে, আমাকে আপনাদের অশ্রু দেখতে হচ্ছে।”

একরাতে বাবা-মা, ভাইসহ নিজের স্বজন হারানোর ১৫ অগাস্টের সেই স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমরা নেই। আপনাদের কষ্ট আমি বুঝি।”

এ সময় গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

সেখানে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা শনিবার রংপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছে গণভবনে আসেন।

গত ১৬ জুলাই রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিআরইউ) দ্বাদশ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মারা যান।

গত শুক্রবার আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয় বিআরইউআর প্রশাসন। রংপুরের পীরগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল তার বাবা-মায়ের কাছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করে।

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ১৫ জুলাই এসে সহিংসতায় রূপ নেয়। ১৬ জুলাই ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় প্রাণহানি হয়। এরপর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন, সহিংসতায় বাড়তে থাকে প্রাণহানি।

আন্দোলনে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার।

উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে সরকার বলছে, এই সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য এসব দল দায়ী এবং তাদের টার্গেট ছিল সরকারের পতন ঘটানো। তবে বিএনপি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।