‘ক্রিকেটীয় ভঙ্গিতে রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন ছাত্রদল নেতারা

ক্রিকেটীয় ভঙ্গিতে রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চাইলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বহিষ্কৃত ছাত্রদলের ১৯ নেতাকর্মী। শনিবার দুপুরে উপজেলার পৌর শহরের পাটবাজারস্থ বিএনপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চাইলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে ১৯ নেতাকর্মীর মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গৌরীপুর পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক কামরুল ইসলাম পিয়াস।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ অন্যায় একপাক্ষিক এবং ন্যায়বিচার পরিপন্থী। বহিষ্কারের পটভূমিতে রয়েছে বিভাজন, দলীয় মনোনয়ন বিতর্ক ও অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের সাথে মতানৈক্য।

এসব কারণের যুক্তিযুক্ত কোন আলোচনা না করে হঠাৎ করেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি জানাচ্ছি, বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আমাদের দলীয় ত্যাগ এবং উল্লেখিত ঘটনার যথাযথ বিশ্লেষণ করা হয়নি। এই অসাংগঠনিক ও অপ্রত্যাশিত বহিষ্কার দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

তিনি আরও বলেন, গত ০৯/১১/২০২৫ ইং তারিখে গৌরীপুরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের উদ্যোগে কেন্দ্রঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা সকল পর্যায়ে পৌছানোর লক্ষ্যে এবং ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক ঐতিহাসিক মহিলা সমাবেশে ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেনের বহর থেকে অত্যন্ত নির্লজ্জ এবং পরিকল্পিতভাবে কিছু স্থানীয় ও বহিরাগত দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসী দেশীয় ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সভাস্থলের উপস্থিত মা ও শিশুদের প্রায় ৫০ জনেরও অধিক গুরুতর আহত করে এবং সভাস্থলের মঞ্চ, চেয়ার, সভাস্থলের পাশে রাখা মোটর সাইকেল ব্যাপক ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে।

এছাড়াও কিছু মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। সভাস্থলের পাশে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর করা হয় যেখানে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি ভাংচুর এবং অবমাননা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এর পরপরই ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের এক নেতার স্ট্রোক এর সাধারণ মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যার গুজব ছড়িয়ে সারা উপজেলায় এমনকি সারা দেশে গুজবের উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়া হয়।

ঐদিন সন্ধ্যায় উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের সহোদর ছোট ভাই শামসুজ্জামান দুর্জয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৃত ব্যাক্তিকে নিজের সহোদর ভাই দাবি করে শুধুমাত্র প্রোপাগন্ডা ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার লক্ষে মায়া কান্নায় ভেঙ্গে পরে স্ট্রোকের মৃত্যুকে হত্যাকান্ড দাবি করে গুজবের উত্তাপ সারাদেশ ব্যাপী ত্বরান্বিত করে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১০/০১/২০১৫ ইং তারিখে উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সুজাউদ্দিন এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক দপ্তর সম্পাদক মোঃ সাদ্দাম হোসেন তালুকদার কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী ১৯ জনকে কোনো কারণ দর্শানো ব্যাতিরেকেই স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। আমরা হতবিহবল হয়ে পড়ি। প্রকৃতপক্ষে, উল্লেখিত মহিলা সমাবেশের দিন আমাদের মধ্য থেকে ৪/৫ জন স্বেচ্ছাসেবক এর দায়িত্ব পালন ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত ছিলো না।

বিগত ৩ দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও প্রকাশের পর দেখা যায় উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে, স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ে উক্ত সভাস্থলে হামলা করে সেই মুহুর্তের ভিডিও এবং স্থির চিত্র তাদের কাছে আছে। সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাসীদের মদদদাতা সোহেল তার নিজের কৃতকর্মের দায় আড়াল করার জন্য আমাদের মতো সাধারণ নেতাকর্মীদেরকে তড়িঘড়ি করে বহিষ্কার করে ঘটনা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এই বহিষ্কারাদেশ অসাংগঠনিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একক স্বেচ্ছাচারিতা ব্যাতীত আর কিছুই নয়। বহিষ্কৃত ১৯ জন প্রত্যেকেরই দলের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ত্যাগ রয়েছে। তৃণমূলে বিগত ১৭ বছর আমাদের এই ১৯ জনের শেষ কর্মীটিরও বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ উত্তর জেলা ছাত্রদের সভাপতির সাথে তুলনাযোগ্য।

তিনি সংবাদ সম্মেলন থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তারা দাবি জানিয়েছেন, এই ঘটনার যথাযথ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনা করার জন্য। তদন্তে তাদের দাঙ্গা হাঙ্গামায় কোনো রকম সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকলে যে কোনো শাস্তি তারা মাথা পেতে নেবেন এবং সেইসাথে আমরা মহিলা সমাবেশে নির্লজ্জ হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এই হামলার সাথে সম্পৃক্তদের তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করে যথাযথ সাংগঠনিক এবং আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের আর্থিক অসাংগঠনিক স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ চেয়েছেন। নারী সমাবেশে হামলার সময় তার অবস্থান ও ভূমিকা সংগঠনের নেতৃত্বকে কলুষিত করেছে বলে মনে করে তার নেতৃত্বের অদক্ষতা এবং অযোগ্যতা প্রমাণ করে। আমরা এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নিকট তার উক্ত কর্মকান্ডের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের বিষয়ে বলেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেইনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পর ছাত্রদলের সবাইকে তার পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয় কিন্তু তারা সেই নির্দেশ অমান্য করে রাস্তা অবরোধ, ট্রেন অবরোধসহ জ্বালাও পুড়াই করতে থাকে। দলীয় শৃঙ্খলা ও নির্দেশ অমান্য করায় দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।