‘ক্ষত’ না শুকাতেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ফের বন্যার আভাস

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বেড়ে স্বল্প মেয়াদে ফের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আগামী তিন-চার দিন ভারি বৃষ্টির আভাসের মধ্যে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শনিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় বলেছে, আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন-সুরমা ও সারিগোয়াইন নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।”

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জে সামনে পানি আরও বাড়বে৷আগামী এক সপ্তাহ দেশের উত্তরাঞ্চলেও পানি বাড়বে বলে জানান তিনি।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

চলতি জুন মাসেই দুই দফায় বন্যা দেখেছে সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা।

জুনের শুরুতে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কয়েক দিন পর পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গত ১৭ জুন কোরবানির ঈদের আগের দুদিন থেকে টানা বৃষ্টিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণাসহ আশেপাশের জেলার অনেক এলাকা ডুবে যায়।

বন্যায় শুধু সিলেটেই কৃষি, মাছ ও রাস্তার ক্ষতি ৭৭৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য দেয় সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন। সেই ক্ষত পুরোপুরি সেরে ওঠার আগেই ফের ওই এলাকায় বন্যার আভাস এল।

তবে এখন পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল আছে রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারকুলি পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল।

ভারি বৃষ্টির আভাস : আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় এসব এলাকার নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।

শনিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে সর্বোচ্চ ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর বাইরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯৯ মিলিমিটার, ঢাকায় ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৫৩, সন্দীপে ৪৭ মিলিমিটার এবং কক্সবাজারের ৪৩ মিলিমিটারসহ কম বেশি প্রায় সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যার বুলেটিনে জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় এক থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত।