ক-দিন বাদে ঈদ ক্রেতাশুন্য নেত্রকোনার দুর্গাপুরের কামারের দোকান

পশু জবাই ও মাংস কাটাকাটিতে ব্যবহার করা ধারালো অস্ত্র বেচা কেনার বড় অংশই হয় বছরের কোরবানি ঈদে। সেই হিসেবে ব্যস্ততা বাড়ে কামারদের দোকানে। তবে নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের দেশওয়ালীপাড়া এলাকার কামারের দোকানগুলোতে এবারের চিত্র ভিন্ন।

দিনভর পরিশ্রম করে কোরবানির ঈদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করছেন। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় বিপাকে রয়েছেন তারা।

এ কাজে নিয়োজিতরা বলছেন, কোরবানি ঈদের বাকি আর ৮/৯দিন। বছরের এই সময়ে জমজমাট বিক্রির অপেক্ষায় থাকেন কামার শিল্পীরা কিন্তু এ বছর ক্রেতা না থাকায় বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে।

বিদেশি যন্ত্র ব্যবহার বাড়ার কারণে তাদের তৈরি দেশীয় গুলোর চাহিদা একদমই কমেগেছে, তারা আরো বলেন ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করছেন,তাই আমাদের তৈরীকরা যন্ত্রপাতির চাহিদা কমেগেছে।

এই যেমন মিটু সরকার। তার সংসার চলে এ কাজেই। ঈদ উপলক্ষে ছুরি, ছাপাতি, দা, বঁটিসহ নানাবিধ সরঞ্জাম তৈরি করে দোকানের সামনে সাজিয়ে রেখেছেন কিন্তু বেচাবিক্রি নেই। এবার স্বপ্নছিল বিক্রি ভালো হবে কিন্তু সারাদিনে একজনও ক্রেতার দেখা মিললো না। যার কারণে মনেও আনন্দ নেই তার।

মিটু সরকার বলেন, বর্তমানে পেশা দিয়ে আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। গ্যাস চুলার ব্যবহারে কয়লা সংকট,দোকানভাড়া বেশী ও লোহার মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা জটিলতার মধ্যে এখন বেচাবিক্রি নেই এভাবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই যেন এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৬০বছর বয়সী পরিতোষ কর্মকার। পূর্ব পুরুষের এই পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে এ কাজে আছেন তিনি। সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক মেশিন ও বিদেশি সরঞ্জামে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় ভাটা পড়েছে ব্যবসায়।

তিনি বলেন, এক সময় কাজ কইরা কুল পাইতাম না, কোরবানি ঈদের মাসখানিক আগে থাইকা দিন রাইত কাজ করা লাগতো। এহন আমাদের তৈরি লোহার জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় আমাদের অনেকেই এ পেশা ছাইড়া দিছে। বাপ দাদার পেশা তাই কষ্ট হইলেও কোনমতে ধইরা রাখছি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বাতেন বলেন, কামারদের তৈরি সরঞ্জামের কদর কমে যাচ্ছে। এতে হারিয়ে যেতে বসেছে কামার শিল্প। এটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার যেনো এ কামারদের পাঁশে দাঁড়াই।

উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ মাসুল তালুকদার বলেন, একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কামার শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা ও কামারদের আর্থিক সহযোগিতার আওতায় আনার পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। আশা করছি অচিরেই তাদের পাশে দাঁড়াতে পারবো আমরা।

পূর্বপুরুষের হাত ধরে এই পেশায় এসেছেন অধিকাংশ কামার। বহু কষ্ট করে বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের দাপটে কামার শিল্পে দুর্দিন চলছে। এমন পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যতে হয়তবা এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাদের দুঃখ-দুর্দ্দশা মোচনের পাশে থাকবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা কামারদের।