খাগড়াছড়িতে আরো ১৩টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা, সাড়ে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে আরো ১৩টি ইটভাটা বন্ধ করেছে প্রশাসন। এ নিয়ে এক দিনে জেলার ১৬টি ইটভাটা বন্ধ করলো স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় সাড়ে ১৩লাখ টাকা অর্থদন্ড করেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে চুল্লির আগুন নিভিয়ে দেয়।

সোমবার (২০ জানুয়ারী) সকালে সদর উপজেলা, দীঘিনালা, মাটিরাঙা ও রামগড়ে অভিযান চালানো হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

খাগড়াছড়ি সদরে আইন অমান্য করে ফসলি মাঠে অনুমতি বিহীন ইটভাটা নির্মাণ করায় ৪টি ভাটার মালিককে ৪লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সাথে ভাটা ৪টিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত সোমবার(২০শে জানুয়ারি) সকাল থেকে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায়।

এ সময় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কাঁচা ইট ধ্বংস ও ইট পোড়া অবস্থায় চুল্লিতে পানি ঢেলে দেয়া হয়। সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায়।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর উপজেলার গঞ্জপাড়া, কমলছড়ি ও ইটছড়ি এলাকায় অবৈধভাবে পরিচালিত ৪টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইটভাটাকে এক লাখ টাকা করে মোট চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এছাড়া, ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় কাঁচা ইট, মাটি ও ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি নষ্ট করা হয়। অভিযানের সময় ইটভাটায় ব্যবহৃত মাটি, জ্বালানি কাঠসহ বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি করা হয়। অভিযানে খাগড়াছড়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ, সদর বন কর্মকর্তা মো: মোশারফ, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার, সদর থানার পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরও ১৩টি ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ২টি টিনের চিমনি ও ৪৫০ঘনফুট কাঠ জব্দ করা হয়। সব অবৈধ ইটভাটার উৎপাদন বন্ধ করতে ফায়ার সার্ভিস দিয়ে আগুন নিভিয়ে এবং কাঁচা ইট নষ্ট করে দেওয়া হয়। এই অভিযান ইটভাটার পরিবেশগত ক্ষতি কমাতে এবং আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতা আফরিন কর্তৃক রামগড় উপজেলায় ৫টি ইট ভাটায় সোমবার দুপুরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, লাইসেন্স ব্যতীত ইটভাটায় ‘ইট প্রস্তুুত ও ভাটা স্থাপন(নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩এর ৪ধারার অপরাধে একই আইনের ১৪ধারা মোতাবেক হাজেরা ব্রিকস-নুরুল ইসলাম, ব্রিকস-নুরজাহান, ব্রিকস- আপন ব্রিকস ও মেঘনা ব্রিকসকে ২লাখ ৫০হাজর টাকা অর্থদন্ড পূর্বক আদায় করা হয়। আদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে চালানের মাধ্যমে জমা দেওয়া হবে।

কর্তৃপক্ষ এ প্রতিনিধিকে আরো জানান, অভিযান পরিচালনা কালে ইট ভাটায় অবস্থিত টিনের চিমনি সমূহ ঘটনাস্থলেই ভূপাতিত করা হয়। অভিযান পরিচালনা কালে রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, রামগড় থানা পুলিশ ফোর্স, বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম সরজমিনে উপস্থিত ছিলেন।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মামুনুর রশীদ জানান, ইটভাটা পরিচালনার জন্য অনুমোদন না থাকায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক উপজেলার দুইটি ইট ভাটার বন্ধ করা হয়েছে। কর্ণফুলী ব্রিক্স ১লাখ ও ফোর বি ভাটা’কে ১লাখ টাকা জরিমানা করা হয। এসময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, বন বিভাগের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় জানান, জেলা সদরের গঞ্জপাড়া, কমলছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এবিসি, এসএন্ডবি, আরপিএস ও জেএন ব্রিকস বন্ধ করা হয়। প্রত্যকে ১লক্ষ করে চার ভাটাকে ৪লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় ইট ভাটার চুল্লী নেভানো হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ জানান, খাগড়াছড়িতে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান: ১৩টি ইটভাটাকে ১০লাখ ৫০হাজার টাকা জরিমানা করে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট। খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন। এ অভিযানে ১৭টি ইটভাটার মধ্যে ১৩টি ইটভাটাকে মোট ১০লাখ ৫০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া পানি ছিটিয়ে কাঁচা ইটসহ সরঞ্জামাদি নষ্ট করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ জানান, অভিযানে খাগড়াছড়ি সদরে ৪টি, দীঘিনালায় দুইটি, রামগড়ে ৫টি এবং মাটিরাঙা ৫টি অবৈধ ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়। এসময় ১৬টি ভাটাকে সাড়ে ১৩লক্ষ ৫০হাজার টাকা জরিমানা আদায় করার পাশাপাশি অনুমোদন না থাকায় ইট প্রস্তুুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩অনুসারে ইটভাটাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জরিমানা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস পানি দিয়ে ইট ভাটার চুল্লির নিভিয়ে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য এর আগে সদ্য বিদায়ী বছরের গত ২৩শে ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির ১৫টি ভাটায় মোবাইল কোর্ট চালিয়ে বন্ধ ও জরিমানা আদায় করা। পরে ইটভাটা মালিকেরা এসব ভাটা আবার চালু করলে সোমবারের অভিযানে তা বন্ধ করা হয়।