খাগড়াছড়িতে আ.লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে সাংবাদিক ও পুলিশসহ আহত-১৫০

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে। সংঘর্ষে সাংবাদিক ও পুলিশসহ উভয়ের অন্তত: অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

মূলত: আওয়ামীলীগের উন্নয়ন শোভাযাত্রা ও বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পৌর শাপলা চত্বর এলাকা এসময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ চলাকলে পৌরসভা কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র কর্মীরা আগুন নেভায়।

মঙ্গলবার(১৮ই জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি মো: আরিফুর রহমান ও এসআই মামুনসহ ৩ পুলিশ ও সাংবাদিক আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে খাগড়াছড়ি পৌরসভার সামনে ১০টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও ৪টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। পৌরসভার অফিস-কাচ ব্যাপক ভাংচুর, সৌন্দর্য বন্ধন দিবাইডার ভেংগে ফেলে। ঘটনার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পরস্পরকে দায়ী করেছে। এই ঘটনায় উপজেলা শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরে যানবাহন চলাচল ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এলাকার পাশ^বর্তী সাধারন মানষের আতংক বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পদযাত্রা কর্মসূচির প্রস্তুুতির সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির অফিসে আওয়ামীলীগের নেতকর্মীরা হামলা চালায়। এতে বিএনপির নেতা হোসেন মো: বাবুসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়।

পরে বিএনপির নেতাকর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামীলীগের অফিসে হামলা চালালে জেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক নুরুল আজম, ৯নং ওয়ার্ডের কমিশনার বিটন চাকমাসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী আহত হয়। এরপর পুরো শহরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। হামলায় উভয়পক্ষ বাঁশ-কাঠের লাঠি, ইট ও লোহার রড ব্যবহার করে। সংঘর্ষ চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টা হতে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলতে থাকে এ সংঘর্ষ। পুরো শহরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ কয়েকটি টিআর সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রয়ে আনর চেষ্টা চালায়। এত্ওে থামানো যায়নি সংর্ঘষ। প্রথম দফায় আ্ওয়ামীলীগ পৌর শাপলা চত্বর দখল করল্ওে পরে বিএনপির র্কাযালয় থেকে নেতা র্কমীরা একত্রিত হয়ে বের হয়ে পৌর শাপলা চত্বর দখলে নেয়।

সংঘর্ষ চলাকালে শহরের দোকানপাট এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এরফান উদ্দীনকে হ্যান্ডমাইক সহকারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা চালাতে দেখা যায়। দুপুর ১২টার দিকে বিজিবি মাঠে নেমে পরিস্থি’তি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় ২ঘন্টা ব্যাপি সংর্ঘষ থামার পর পুলিশ সুপার নাঈমুল হক গাড়ি নিয়ে শহর প্রদক্ষিন করে। এ সময় সাংবাদিকরা তার সাক্ষাতকার নিতে চাইলে তিনি সাক্ষাতকার দেননি। সংর্ঘষ চলাকালে পুলিশ ্ও আনসার সদস্য ও আহত হয়।

বর্তমানে শহরে থমথমে পরিস্থিত বিরাজ করছে।
আওয়ামীলীগ উন্নয়ন শোভাযাত্রা এবং বিএনপি তাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী পদযাত্রা বের করাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। থেমে থেমে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে জেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক নুরুল আজম, মো: আলমাছ, ক্যজরী মারমাসহ ৮০-৯০জন এবং জেলা বিএনপির সমবায় সম্পাদক মো: হোসেন বাবুসহ ৩০-৪০জন আহত হয়েছেন। আহত কয়েকজনকে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উভয় পক্ষের আহতরা হলেন, ওসি মো: আরিফুল রহমান(৪৪), এসআই মো: মামুন(৪০), ৯নং ওয়ার্ডেও কমিশনার বিটন চাকমা(৩২), ওডো(২০), জিরময়(২৬), রানা কুমার(২৯), মো: দুলাল(৩৯), ইয়ামিন পাটোয়ারি(২৫), মো: তাওেশ, সুমন(৩৩), শামীম বাজি(২৯), জহিরুল ইসলাম(২৮), সাধনা চাকমা(২০), মো: আব্দুল মান্নান(৫০), সুমন(২১), আরিফ(১৭), সন্জিত দাশ(৩০), আলমাজ হোসেন(৩৫), রুবেল(১৫), ক্যজরী মারমা(২৫), সুমন(১৪), শাহ জামান(৫০), বেলাল হোসেন(৫০), মিনাজুল আবেদীন(৩৩), ইক্কু বাবু চাকমা(৩৫)। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসআই মো: মামুন ও ইক্কু বাবু চাকমাকে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও না আসায় পরক্ষনে আমর্ড পুলিশ ও বিজিবি দুই প্লাটুন নেমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।

জেলা বিএনপির র্অথ সম্পাদক মফিজুর রহমান দাবি করেন,তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় আওয়ামীলীগ হামলা করে তাদের প্রায় ৫০জন নেতাকর্মীকে আহত করে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা পদযাত্রায় অংশ নিতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হওয়ার প্রাক্ককালে আওয়ামীলীগ বিনা উস্কানিতে হামলা চালিয়ে ভাংচর করেছে। এছাড়া আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়েছে।

এতে বিএনপির ১০০জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হন।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল হোসেন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির সরকারের উন্নয়ন বিরোধী কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ি শহরের অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তারা আওয়ামীলীগের অফিসে হামলা চালিয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত

আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিএনপির হামলা অভিযোগ:- পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা হামলা চালিয়ে শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সকালে জেলা শহরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, সকাল ৯টায় জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে জেলা শহরের নারিকেল বাগানস্থ দলীয় কার্যালয়ে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসময় কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্থ করতে বিএনপির লোকজন বিনা উস্কানিতে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সাংবাদিক নুরুল আজম, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম ইসমাইল, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ক্যাজরী মারমাসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মীরা।

এছাড়া এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ ও সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। হামলা চালানো হয়েছে পৌরসভায়ও। এসময় পৌরসভার বিভিন্ন আসবাবপত্র, জানালার গ্রিল ভেঙে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পৌরসভার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে অগ্নিসংযোগ করে তারা।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, দলীয় কার্যালয়ে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচির আয়োজনে এসে বিএনপি নেতা-কর্মীরা হঠাৎই হামলা চালিয়ে আমাদের নেতা-কর্মী, পুলিশ-সাংবাদিকসহ শতাধিক লোকজনকে আহত করে। পৌরসভারও ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে তারা। এ ঘটনার সুষ্টু বিচার দাবি করেন তিনি।

উন্নয়ন শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসার পথে বিএনপির ক্যাডাররা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় খাগড়াছড়ি পৌরসভাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে। আওয়ামীলীগের অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হয়েছে।তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ।তিনি আরো জানান,অতর্কিত হামলায় পৌরসভা কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে বিএনপি।

এ ঘটনায় পুলিশের নিষ্কিয়তাকে দায়ী করেন তিনি।
এসময় খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি মো: আরিফুর রহমান, সদর থানার দুজন এসআইসহ অন্যান্য পুলিশ ও সাংবাদিক আহত হন।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন-আমাদের নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে, এতে আমাদের জেলা আওয়ামীলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক নুরুল আজমসহ ৫০জনের অধিক গুরুত্ব আহত হয়েছে। বিএনপির সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।