খাগড়াছড়িতে চবি ৫ শিক্ষার্থী অপহরণের ৩দিন পর যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে চবি ৫শিক্ষার্থী অপহরণের ৩দিন পর যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। খাগড়াছড়ি শহরের সদর উপজেলার গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা যায়নি ঘটনার ৩দিন পার হলেও। উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোর থেকে মধুপুর, পানখাইয়া পাড়া, চাবাই সড়ক ও নোয়াপাড়া এলাকায় টহল ও ব্যাপক তল্লাশি কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অপহৃতদের উদ্ধারে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।”
খবরে প্রকাশ গত বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথে ৫শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। অপহৃতরা হলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য রিশন চাকমা এবং তার চার বন্ধু চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী। অপহৃতরা সকলে রাঙামাটি ও বান্দরবানের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
অপহরণের জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-কে দায়ী করেছে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
অপহৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও তাঁদের স্বজনেরা।
অপহৃত চবি’র নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমার মা ভারতী চাকমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সন্তানকে ফেরত চেয়ে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ভারতী চাকমা লিখেছেন- “প্লিজ কারো মায়ের বুক খালি না করে দোষ থাকলে উপযুক্ত শাস্তি দিন, তবুও সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারো বুকে না লাগে।
আমি হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন আমাদের সন্তানদের। তিন দিনেও উদ্ধার হয়নি খাগড়াছড়িতে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের(চবি) ৫শিক্ষার্থীসহ ছয় জন। এ নিয়ে পরিবারে উদ্বেগ বাড়ছে।
সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্ট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি’র) সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা এক বিবৃতিতে রিশান চাকমাকে তাদের ছাত্র সংগঠনের চবি শাখার সদস্য দাবী করে বলেন, তারা গতকাল(মঙ্গলবার) রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বৈসাবি উৎসব শেষ করে খাগড়াছড়ি হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বাসে টিকেট না পাওয়ায় মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার কুকিছড়া এলাকায় মৈত্রীময় চাকমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেছিল।
সকাল ৭টার গাড়িতে তাদের চট্টগ্রামে ফেরার কথা। কিন্তুু গিরিফুল এলাকা থেকে তাদেরকে জোরপূর্বক তুলে নেয়া হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী টমটম চালককেও অপহরণ করা হয়। এই ঘটনার জন্য আমরা ইউপিডিএফ(প্রসীত) কে দায়ী করেন তিনি। তবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রæুপের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
এই ঘটনার জন্য আমরা ইউপিডিএফ(প্রসীত) কে দায়ী করেছেন। তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রুপের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে অপহরণের সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। এই ধরনের প্রতিহিংসা পরায়ন রাজনীতি আমরা করি না। আমরা সবসময় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের পক্ষে। কোন মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, “ঘটনার পর এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, চবি’র ৫ শিক্ষার্থীসহ ৬ জনকে অপহরনের ঘটনায় পাহাড়ের আঞ্চলিক একটি সংগঠন জড়িত থাকতে পারে। আমরা মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে উদ্ধারের চেষ্টা করছি।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল আরো জানান, অপহৃতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চলছে। আমার অপহৃতদদের উদ্বারে সব ধরনের চেষ্টা করছে। সে সাথে বিভিন্ন সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৈসাবি উৎসব শেষে ফেরার পথে গত বুধবার(১৬ই এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের ভোর সাড়ে ৬টার সময় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে সন্তু লারমা সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্য চবি শাখার রিশান চাকমাসহ ৫শিক্ষার্থীসহ ৬(ছয়) জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। রিশান চাকমা চবি’র আন্তজাতিক সর্ম্পক বিভাগের শিক্ষার্থী।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন