খাগড়াছড়িতে নদীর পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ-২, একজনের লা*শ উদ্ধার

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা ও ল²ীছড়ি ২টি উপজেলাতে নদীর পানির ¯্রােতে ভেসে গিয়ে ২জন নিখোঁজ রয়েছে। একজনের লাশ উদ্ধার করেছে। জেলার দীঘিনালা ও ল²ীছড়িতে নদীর পানির ¯্রােতে ভেসে গিয়ে এখনও দুইজন নিখোঁজ রয়েছে। অপরদিকে টানা ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। খাগড়াছড়ি জেলাতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় প্রশাসনের সতর্কতা জারি করেছে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে লক্ষীছড়ি ইউনিয়নের বিজয় কার্বারী পাড়াস্থ লক্ষীছড়ি খালে মাছ ধরতে গিয়ে উক্রাচিং মারমা(১৭) নামে একজন পানির ¯্রােতে ভেসে গেলে পরে লাশ পাওয়া যায়।
অপরদিকে দীঘনিালার মাইনি নদীতে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে তড়িৎ চাকমা(৫৫) নামে একজন পানির ¯্রােতে ভেসে গেছে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের উদ্বারে তৎপরতা চালাচ্ছে।
এদিকে টানা ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। পার্বত্য খাগড়াছড়িতে টানা বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাহাড় ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গত তিন দিন ধরে জেলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং আবহাওয়া গুমোট থাকায় বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শুক্রবার(৩০শে মে) সকালেও থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যায়। জেলার প্রধান দুই নদী চেঙ্গী ও মাইনি-কাচলং নদীর পাশাপাশি শহরের আশপাশের ছড়া ও খালে পানির চাপ বাড়ছে। এতে করে সদর উপজেলার কলাবাগান, সবুজবাগ, কুমিল্লাটিলা ও শালবন এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে এবং সচেতন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্কতা জারি করা অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার(৩১শে মে) সকালে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় ও সদর থানার ওসি মো: আব্দুল বাতেন মৃধা মাইকিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয়দের সতর্ক করেন এবং জরুরি প্রয়োজনে আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে বলেন।
খাগড়াছড়ি আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ঘণ্টায় জেলায় ৬৭মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধস ও জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস এবং স্বেচ্ছাসেবক দলগুলোকে প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার(২৯শে মে) ও শুক্রবার(৩০শে মে) সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শালবনসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপুনভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে শুরু করে জেলা প্রশাসন। মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, যুব রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা।
এদিকে ল²ীছড়িতে নিখোঁজ উক্রাচিং মারমার লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সর্ভিস। প্রায় আড়াই ঘন্টা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৫০ফুট দূরুত্বে তার লাশ পাওয়া যায় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের পক্ষ হতে ল²ীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেটু কুার বড়ুয়া লাশ সৎকার করতে পরিবারকে ২০হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।
ভারী বর্ষণ অব্যাহত, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৩সহ¯্রাধিক পরিবার, পাহাড়ে ধসের শঙ্কা ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের ধস এড়াতে প্রশাসনের মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে খাগড়াছড়িতে থেমে থেমে চলছে মাঝাড়ি মাত্রার বর্ষণ। এতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কার। দুর্যোগ মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে প্রস্তুুতি রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিতে সচেতনতামূলক মাইকিং মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ঘণ্টায় ২৮৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ৩নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বলবৎ রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে গত ২৪ঘণ্টায় ২৮৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে একদিনে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, ভারী বর্ষণের ফলে খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলাতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি পাহাড়ের ওপরে, পাহাড়ের পাদদেশে ও পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী লোকজনকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না থেকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হবে।
অতি বৃষ্টির সময় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান না করা, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ বা স্থানীয় প্রশাসনের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন