খাগড়াছড়িতে পুশ-ইন ভারতের, ১১৮জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পুশ-ইন অব্যাহত রেখেছে ভারত, এ যাবত ১১৮জনকে নিজ দেশে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার দুর্গম গোমতী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শান্তিপুর গ্রামের দোকানদার মো: আবুল হাসেম। গত ৭ই মে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় তিনি প্রথম রাস্তার পাশে নারী ও শিশুসহ একটি জটলা দেখতে পান।
কথা বলে জানতে পারেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ) তাদের পুশ-ইন করেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি ক্ষুধার্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত ওই ২৭জনকে শুকনা খাবারের ব্যবস্থা দেন এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের(বিজিবি) ক্যাম্পে খবর দেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জানাজানি হতে থাকে। নড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। ভোরের প্রায় একই সময়ে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ও পানছড়ির লোগাং সীমান্ত দিয়ে আরও ৫৩জনকে পুশ-ইন করে বিএসএফ। এভাবে ৭ই মে একদিনেই মোট ৮০জনকে পুশ-ইন করা হয়। প্রথমে তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সন্দেহ করা হলেও, পরে খোঁজ নিয়ে বাংলাদেশি পরিচয় নিশ্চিত হলে তাদের পর্যায়ক্রমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এরপর গত ২২শে মে রামগড় সীমান্তের ফেনী নদী দিয়ে একই পরিবারের পাঁচজনকে কোমরে প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৬শে মে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়নের আচালং পাড়া সীমান্ত দিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৯জন এবং পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৪জনকে পুশ-ইন করা হয়।
সবশেষ গতকাল শুক্রবার(৩০শে মে) সকালে নতুন করে আরও ১৪জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে। এই নিয়ে এখন পর্যন্ত ১৩২জনকে পুশ-ইন করেছে ভারত।
এই পুশ-ইন প্রক্রিয়াকে অমানবিক বলছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, বাংলাদেশি হলে সরকারিভাবে যোগাযোগ করে ফেরত পাঠানো যেত, কিন্তু হাত-পা বেঁধে সীমান্তের এপাড়ে ছেড়ে দেওয়া অমানবিক। পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিরা মূলত গুজরাট ও হরিয়ানা রাজ্যে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন।
গত ২রা মে রামগড় সীমান্তের ফেনী নদীতে একই পরিবারের ৫জনকে পুশ-ইনের বিষয়টি তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করে। স্থানীয়দের রেকর্ড করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, কোমড়ে প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে উমেদ আলী, তার স্ত্রী ও তিন মেয়েকে ফেনী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে তারা ভাসতে ভাসতে তীরে এলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করেন। উমেদ আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামে। দশ বছর আগে তিনি অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে হরিয়ানায় একটি ইটভাটায় কাজ শুরু করেন।
রামগড় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন লাভলু বলেন, ভারত যেভাবে পুশ-ইন করছে, তা সম্পূর্ণ অমানবিক। রাতের আঁধারে কারও হাত-পা, চোখ বেঁধে সীমান্ত নদীতে ফেলে দিয়েছে। ভারত যদি নিশ্চিত হতো এরা বাংলাদেশি, তাহলে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করতে পারতো।
গোমতী ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা শামছুল হক জানান, গুজরাট থেকে রাতের বেলা এক কাপড়ে ধরে এনে, হাত বেঁধে বিমানে করে ত্রিপুরায় পাঠিয়ে, সেখান থেকে সুযোগ বুঝে গ্রুপ করে করে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ-ইন করছে। নারী ও শিশুর সঙ্গেও অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে।
পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য মতে, প্রায় অন্তত: ৪০০জনকে গুজরাট থেকে একসঙ্গে ধরে আনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পুশ-ইন হওয়া সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। গত ৭ই মে প্রথম পুশ-ইন হওয়া ৮০জনের মধ্যে ৭৩জন কুড়িগ্রামের, ৬জন নড়াইলের, এবং ১জন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। কেবল মাটিরাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে এখন পর্যন্ত ৮৩জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে।
পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো ভারতীয় বা রোহিঙ্গা আসেননি বলে জানান মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম। তিনি বলেন, আমরা পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাচাই করছি এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইউএনওদের সহযোগিতায় হস্তান্তর করছি। নতুন করে আসা ১৪জনের মধ্যে ১২জন কুড়িগ্রাম ও ২জন দিনাজপুরের বাসিন্দা বলে জেনেছি। এ বিষয়ে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
পানছড়ি উপজেলার সীমান্ত দিয়ে দুই দফায় মোট ৪৪জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে এবং তাদের সবাইকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা নাসরিন বলেন, “এখন পর্যন্ত যাদের পুশ-ইন করা হয়েছে, সবাই বাংলাদেশি। আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হস্তান্তর করেছি। ”
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে মোট ১৩২জনকে পুশ-ইন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছি এবং স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি সতর্ক রয়েছে।
সর্বশেষ সীমান্তবর্তী মাটিরাঙ্গা উপজেলা দিয়ের আবারও ১৯জন ভারতীয় নাগরিককে পুশ-ইন করেছে ভারতীয় সিমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এই পর্যন্ত ১৩২জন পুশ-ইন করা হয়েছে।
গত সোমবার(২৬শে মে) ভোর রাতে উপজেলার তাইন্দং ইউপির আসালং সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশ-ইন করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৬জন নারী, ৭জন পুরুষ ও ৬জন শিশু রয়েছে। ভারতের হরিয়ানা রাজ্য থেকে গ্রেপ্তার করে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির সীমান্ত দিয়ে নতুন করে ১৯জন জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। সোমবার ভোরের দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের আচালং সীমান্ত দিয়ে তাঁদের পাঠানো হয়।
মাটিরাঙ্গা যামিনীপাড়া ব্যাটালিয়ন(২৩ বিজিবি) এর অধীনস্থ কৃষনদয়াল বিওপির টহল কমান্ডার মো: হাবিলদার এজাজুল এর নেতৃত্বধীন টহল দল আসালং রোড নামক এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করেন। পুশ ইন হওয়াদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে।
তাদেরকে ভারতের হরিয়ানা রাজ্য থেকে গ্রেফতার করে মাটিরাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা হয়। পরে আচালং ডিপিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে।
আটককৃতরা সকলে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম এলাকায় তাদের ঘরবাড়ি রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
এর আগে চলতি মাসে কয়েক দফায় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৮৪জন পুশ ইন হয়েছে। গত ৭মে জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৭৯জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ করেছে বিএসএফ। মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর দিয়ে ২৭জন, তাইন্দং দিয়ে ১৫জন ও পানছড়ি উপজেলার লোগাং রুপসেনপাড়া বিওপি’র সীমান্ত দিয়ে ৩০জনকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। রামগড় উপজেলা সীমান্ত দিয়ে এক পরিবারের শিশুসহ পাঁচজনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। এখন সোমবার(২৬শে মে) পর্যন্ত সর্ব মোট ১০৩জন পুশ ইন করা হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, পুশ ইন হওয়া সবাই বিজিবির কৃষ্ণ দয়াল বিওপির আওতাধীন ডিবি পাড়া স্কুলে অবস্থান করছে। তারা যদি বাংলাদেশি নাগরিক হয় সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরিচয় শনাক্তের কাজ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
আগের বার রামগড় সীমান্ত দিয়ে এক পরিবারের শিশুসহ পাঁচজনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। গত বৃহস্পতিবার(২২শে মে) ভোরের দিকে তাঁদের আটক করে বিজিবি। জেলার রামগড় সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ৫জন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত বুধবার(২১শে মে) গভীর রাতে রামগড় পৌরসভার ফেনীর কূলের কাজীরচর এলাকা সীমান্ত দিয়ে দিয়ে ১১৪ব্যাটালিয়নের বিএসএফ তাদের জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। রামগড় সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা বিএসএফ-এর পাঠানো একই পরিবারের ৫জনকে আটক করেছে প্রশাসন।
সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত পেরিয়ে রামগড়-ফেনী সড়কের সোনাইপুল বাজার এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় লোকজন তাদের দেখতে পেয়ে মহামুনি বিজিবি ক্যাম্পে খবর দেন। পরে বিজিবি সদস্যরা এসে তাদের হেফাজতে নেয়। পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিরা ভারতের গুজরাট রাজ্যের বাসিন্দা এবং সবাই মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা ভারতের হরিয়ানার একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রæুম সীমান্তের ফেনী নদীতে গভীর রাতে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয় তাঁদের। ভোরবেলা তাঁরা বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ৪৩ব্যাটালিয়নের মহামুনি বিওপির বিজিবি বৃহস্পতিবার(২২শে মে) সকাল ৬টার দিকে তাদের আটক করে। আটককৃতরা হলো উমেদ আলী(৪২), তার স্ত্রী সেলিনা বেগম(৩৫), তিন কন্যা সন্তান সুমাইয়া(৮), রুম্পা(১২) ও রুমি(১৫)।
বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া উমেদ আলী বলেন, ভারতের হরিয়ানা থেকে তাদের ধরে এনে হাত-পা বেধে ত্রিপুরা সীমান্তের ফেনী নদীতে ফেলে দেয় বিএসএফ। তারা হরিয়ানায় ইটের ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
উমেদ আলী আরও বলেন, গত বুধবার(২১শে মে) দিবাগত ১২টার দিকে মারধর করে জোরপূর্বক নদীতে ফেলে দেওয়ার পর সারারাত তারা নদীর পানিতে ভেসে এসে বৃহস্পতিবার(২২শে মে) ভোর ৫টার দিকে নদীর বাংলাদেশ কিনারায় ভিড়ে। পরে তীরবর্তী গ্রামবাসিদের সহায়তায় তারা সোনাইপুল এলাকায় পৌঁছে। তিনি আরও জানান, এর আগে বিএসএফ তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি কেড়ে নেয়। নদীতে ফেলার আগে তাদের কোমরে প্লাস্টিকের খালি বোতল বেধে দেয়া হয়। ফলে তারা নদীর পানিতে ভাসতে ভাসতে এপারে চলে আসে।
আটক উম্মেদ আলী স্ত্রী সেলিনা বেগম জানান, গুজরাট থেকে প্রথমে বিমানে এবং পরে বাসে করে তাদের ত্রিপুরা রাজ্যে নেওয়া হয়। এরপর রাতে হাত ও চোখ বেঁধে ফেনী নদীর পাড়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে নদী পেরিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। পরে ভারতের দিকে ফিরে যেতে চাইলে বিএসএফ সদস্যরা তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
মানবিক কারণে আটককৃতদের রামগড় হাই স্কুলে বিজিবি ও পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। ৫জনকে সাময়িকভাবে রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁদের উপজেলা প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(দায়িত্বপ্রাপ্ত) ইসমত জাহান বিষয়টি নিয়ে বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন ও রামগড় থানা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
গত বুধবার(৭ই মে) ভোরে জোরপূর্বক তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা সম্ভব হয়নি। গত বুধবার(৭ই মে) ভোরে জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুমতি ইউনিয়নের দক্ষিন শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ৩টি পরিবারের আনুমানিক ২৭জন ভারতীয় নাগরিক। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতীয় নাগরিকরা উঠেন সীমান্তবর্তী জনৈক আবু তাহের এর বাড়িতে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের ভারতীয়দের উদ্বৃতি দিয়ে জানান, ‘তাদেরকে ভারতের গুজরাট থেকে ত্রিপুরায় নিয়ে আসে বিএসএফ সদস্যরা। পরে সেখান থেকে গভীর রাতে কাটাতারের বেড়া পার করে ছেড়ে দিয়ে যায় তারা। ভোরে আজানের শব্দ শুনে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে তার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে সকালে তাদেরকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
’আবু তাহের জানান, বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকরা আবুল হোসেন মেম্বারের বাড়িতে রয়েছেন। এছাড়া যামিনী পাড়ার ২৩বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন তাইন্দং বিওপি’র সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ২২জন ভারতীয়(গুজরাট রাজ্যের) মুসলিম নাগরিক মাটিরাঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বলে জানা যায়। এছাড়াও খাগড়াছড়ির ৩২বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লোগাং রুপসেনপাড়া বিওপি’র সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ৩০জন ভারতীয়(গুজরাট রাজ্যের) মুসলিম নাগরিক পানছড়ি উপজেলায় অনুপ্রবেশ করে বলে জানা যায়।
এসব নাগরিকদের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশী নাগরিক ছিলেন এমন অজুহাত দেখিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের সাথে আরও ৪০০থেকে ৫০০জন ভারতী মুসলিম বিএসএফের তত্ত¡াবধানে রয়েছে বলে জানা যায়। তাদেরকে বিএসএফ কর্তৃক খেদাছড়া, যামিনীপাড়া, খাগড়াছড়ি ও পানছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করা করা হতে পারে। এ ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য গুজরাট রাজ্য হতে বিমান যোগে ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে এখনো বিজিবি বা প্রশাসনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সীমান্ত অতিক্রম করে আসা পাঁচ ভারতীয় নাগরিককে বিজিবি আটক করেছে। বর্তমানে তারা বিজিবি ও পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন রামগড় উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ইসমত জাহান তুহিন বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম মাটিরাঙ্গা উপজেলা দিয়ের আবারও ১৯জন ভারতীয় নাগরিককে পুশ-ইনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যাদের জোরপূর্বক পুশ ইন করা হয়েছে, তারা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছে। তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তারা যদি বাংলাদেশি নাগরিক হয় সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরিচয় শনাক্তের কাজ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
তিনি আরো বলেন, যাঁদের জোরপূর্বক পাঠানো হয়েছে, তাঁদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বর্তমানে তাঁদের বিজিবির হেফাজতে তাইন্দং ইউনিয়নের ডিবিপাড়ার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্তের কাজ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খাগড়াছড়ি দায়িত্ব প্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা জানান, মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্তে জন ৭৯জন, রামগড়ে ৫জন ও সর্বশেষ আবার মাটিরাঙ্গা দিয়ে ১৯জন অনুপ্রবেশ করেছে। তারা বিজিবি দায়িত্বে আছেন। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের খাওয়ানো থাকার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল জানান, আটককৃতদের প্রকৃত পরিচয় যাচাইয়ে কুড়িগ্রামের চর সুপার কুটি গ্রামের স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা নিশ্চিত করেছেন, পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিরা ওই এলাকারই বাসিন্দা। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের করা হয়েছে এবং কিছু রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, পুশ ইন হওয়া সবাই স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে বিজিবি পাহারায় রয়েছে। তাঁদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশি হলে তাঁদের নিজ নিজ জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার(২২শে মে) ভোর ৫টার দিকে ভোরের জেলার রামগড় নদীর কিনারা সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ৫জন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তবে তাঁদের আটক করে বিজিবি। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁদের উপজেলা প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন ও রামগড় থানা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এই পর্যন্ত ১৩২জন পুশ ইন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৭মে জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৭৯জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ করে বিএসএফ। মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর দিয়ে ২৭জন, তাইন্দং দিয়ে ১৫জন ও পানছড়ি উপজেলার লোগাং রুপসেনপাড়া বিওপি’র সীমান্ত দিয়ে ৩০জনকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। রামগড় উপজেলা সীমান্ত দিয়ে এক পরিবারের শিশুসহ পাঁচজনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। এখন সোমবার(২৬শে মে) পর্যন্ত সর্ব মোট ১৩২জন পুশ ইন করা হয়েছে।