খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দান উদযাপন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জেলাতে পালিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে খাগড়াছড়ি শহরের কেন্দ্রীয় ভাবে শতবর্ষে ঐতিহ্যবাহি য়ংড বৌদ্ধ বিহারে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উদ্দেশে বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার দান, কল্পতরু দান ও পিন্ড দানসহ নানা ধর্মীয় দান ও স্বধর্ম শ্রবণ করেন বৌদ্ধ নর-নারীরা।
দিনব্যাপী আয়োজনে মূল আকর্ষণ ছিল কঠিন চীবর দান যেখানে মাত্র ২৪ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে কাপড় বুনে তৈরি করা হয় চীবর, যা পরে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বৌদ্ধ শাস্ত্রমতে, গৌতম বুদ্ধের অনুগামী মহা উপাসিকা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত এ রীতি অনুযায়ী চীবর তৈরির প্রক্রিয়া যেমন শ্রমসাধ্য ও কষ্টকর, তেমনি তা ভিক্ষু সংঘকে দান করা সবচেয়ে উত্তম ও পুণ্যময় দান হিসেবে বিবেচিত।
এ উপলক্ষে শুধু য়ংড বৌদ্ধ বিহারেই নয়, ধর্মপুর আর্য বন বিহার, পানছড়ির শান্তিপুর অরণ্য কুটিরসহ জেলার বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারেও চীবর দান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উৎসবমুখর পরিবেশে নারী-পুরুষ, ভিক্ষু এবং উপাসক-উপাসিকারা অংশ নেন এই ঐতিহ্যবাহী দানোত্তম অনুষ্ঠানে।
এরআগে ৯টি উপজেলাসহ পার্বত্য এলাকায় প্রবারণা পূর্ণিমা ঘিরে ব্যস্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সম্প্রদায়রা। আর কয়েকদিন আগেই পাহাড়ের আকাশে দেখা গেল রঙ-বেরঙের হাজারো ফানুস। অশুভকে বিদায় জানিয়ে শান্তির প্রার্থনায় মুখর হয়ে উঠবে পুরো পাহাড়। গত ৬ই অক্টোবর পালিত হল বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসবকে ঘিরে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
বৌদ্ধদের মতে, আষাঢ়ের পূর্ণিমা থেকে শুরু হওয়া তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে আসে প্রবারণা পূর্ণিমা। প্রতিবছর পূর্ণিমা তিথিতে তারা এই ধর্মীয় উৎসব পালন করেন। মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ প্রবারণাকে বলেন ‘মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’। এই দিনটি উপলক্ষে প্রার্থনা করা হয় সমগ্র মানবজাতির শান্তি ও মঙ্গল কামনায়।
বিশ্বাস করা হয়, রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৌতম সন্ন্যাস গ্রহণের সময় চুল কেটে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই স্মরণে ‘চুলামনি’ উদ্দেশ্যে আকাশে ফানুস উড়িয়ে প্রবারণা উদযাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
এই উৎসব ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি কোণজুড়ে তৈরি হয় প্রাণের মিলনমেলা। উৎসবে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রথযাত্রা, পিঠা তৈরি, ফানুস ওড়ানো এবং হাজারো প্রদীপ প্রজ্বালনসহ নানা আয়োজন। এবারের উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বাঁশ দিয়ে তৈরি রাজহংসী সদৃশ একটি রথ।
মারমা তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ভাষায় উৎসব সংগীত গেয়ে রথ টেনে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার প্রদক্ষিণ করছেন এবং পরে রথ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে খাগড়াছড়ির মারমারা চেংগী নদী, রাংগামাটির মারমা কাপ্তাই বাধ কর্নফুলী নদী, বান্দরবান মারমা সাঙ্গু নদী, কক্্রবাজার রাখাইনরা মহাসমূদ্র সৈকতে।
ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষের য়ংন্ড বৌদ্ধবিহার প্রাংগনে ও ছোট রাজার মাঠে ইতোমধ্যে বাঁশ ও কাঠের কাঠামোয় রথ তৈরিতে সীমিত পরিসরে পালিত হয়েছে। কঠিন চীবর দান ও ফানুস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কারিগর হ্লাশৈ ও অং হ্লা শৈ মারমা।
এদিকে নিরাপত্তার দিকটিও সুনিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন। বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম জানান, কঠিন চীবর দান উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা।
বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান ¤্রাসাথোয়াই মারমা জানান, অনাকাংখিত মারমা ৮ম শ্রেনী পড়–য়া ধর্ষিত হওয়া প্রতিবাদের ফলে সহিংসতায় ৩জন নিহত ও হতাহতদের প্রতি সম্মান সহানুভুতি ও আর্থিক সাহায্য হাত দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রবারনা পুর্নিমা কর্মসূচীর পর কঠিন চীবর দান সীমিত পরিসরে পালন করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল জানান, সহিংস ঘটনার পর অবরোধ তুলে নেওয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদায় ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসারে কঠিন চীবর দান পালন করছে। তবে আইন শৃংখলা বাহিনী গুরত্বপুর্ন জায়গায় কঠোর অবস্থানে থাকবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন